ভোলায় সার কারখানা স্থাপনে গ্যাস সরবরাহে অনুমতি দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোছা: মোর্শেদা ফেরদৌস স্বাক্ষরিত ১৮ জুন তারিখে ২৮.০০.০০০০.০০০.০৩৪.২৯.০০২১.২২.১২৮ নং স্মারক সূত্রে এ তথ্য জানাগেছে।
জানা গেছে, ভোলায় প্রস্তাবিত সার কারখানা স্থাপনের লক্ষে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ‘জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ’কে নির্দেশ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ভোলা জেলার গ্যাসক্ষেত্র সমূহের অবশিষ্ট উত্তোলনযোগ্য মজুদ থেকে সম্ভাব্য ২০২৭ সাল হতে আনুমানিক ১৮ বছর গ্যাসের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে দৈনিক ৪০-৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস প্রস্তাবিত সার কারখানায় সরবরাহ করা যেতে পারে। এছাড়া গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর অনুমোদন সাপেক্ষে ন্যূনতম ৪০ টাকা ঘনমিটার মূল্য এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনের নিরিখে বর্ধিত মূল্য নির্ধারিত হলে তা প্রজোয্য হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ৩০ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩৬.০০.০০০০.০০০.০৬২.১৪.০০০.০০০২.২৩.১৬৮ স্মারকে ভোলায় সার কারখানা স্থাপনের জন্য গ্যাসের প্রাপ্যতা বিবেচনায় দৈনিক ৫০-৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস দীর্ঘ মেয়াদে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা যাবে কি না সে ব্যাপারে মতামত প্রদানের নির্দেশা প্রদান করা হয়। তথপ্রেক্ষিতে গত ১৩ মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুবায়েত খান স্বাক্ষরিত ২৮.০০.০০০০.০০০.০২৯.৫০.০০০৫.২১.১৭৪ স্মারকে রয়েল এম্বাসি অফ সৌদি আরাবিয়া, ঢাকা হতে ভোলায় প্রস্তাবিত সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে ভোলায় প্রস্তাবিত সার কারখানা স্থাপনের লক্ষে দীর্ঘ মেয়াদে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের যে ধাপ ছিল তার অনুমতি পেতে পিছন থেকে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে গেছে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সদস্যরা। এ ব্যাপারে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম ঢাকা অঞ্চলের সভাপতি (উপ-সচিব) সাইফুল ইসলাম কামরুজ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দেশের মধ্যে আরো ৬টি সারকারখানা রয়েছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের ভোলাতে যেহেতু পর্যাপ্ত গ্যাস রয়েছে এখানে সারকারখানা স্থাপন করলে সরকারকে গ্যাস সরবরাহে কোন বেগ পেতে হবে না।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে ভোলায় সারকারখানা স্থাপনে সম্মত হয়েছে। এর জন্য প্রি-ফিজিবিলটিও হয়েছে, সেটারও পজিটিভ মতামত দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে কয়েকটি চিঠি ইস্যুও হয়েছিল, কিন্তু সামনের দিকে কাজ এগুচ্ছিল না। এরপর চলতি বছরেও ২টি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভোলার গ্যাস ভোলায় দেয়ার দাবীতে ভোলাবাসী যে আন্দোলন করেছে তাতে সরকারের টনক নড়েছে। সরকার ভোলায় সারকারখানা স্থাপনের জন্য যথেষ্ট আগ্রহী। এখানে সারকারখানা স্থাপন করলে সরকার সড়ক যোগে পরিবহনের সাথে সাথে নৌ-পথেও দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে সার সরবরাহ করতে পারবে।
সাইফুল ইসলাম কামরুজ আরো বলেন, সরকার ভোলা থেকে গ্যাস প্রথমে বরিশাল নিবে। তারপর সেখান থেকে খুলনা ও সাভারের আমিন বাজারে (২টি জায়গায়) গ্যাস নেয়ার চিন্তা রয়েছে। কিন্তু ভোলার গ্যাস ভোলায় ব্যবহার না করে অন্যত্র নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই সরকার ভোলায় সারকারখানা স্থাপনে সম্মত হয়েছে। এখানে গ্যাস ব্যবহার করার পরে যা থাকে তা অন্যত্র নিবে সরকার।
উপ-সচিব আরো বলেন, ভোলায় সারকারখানা স্থাপন করলে কৃষি ও পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন অনেকেই লেখালেখি করছেন। কিন্তু বিষয়টি সেরকম নয়। এখন পরিবেশের এসেসমেন্ট করা হবে। আর কৃষির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে, যেমনটা পলাশে হচ্ছে। ইউরিয়া সারকারখানা স্থাপনের ফলে যে ধোয়া-টা বের হবে সেটাকে পিউরিফাইয়ের মাধ্যমে লিকুইট করে সরকার বিএডিসির মাধ্যমে একটা প্রজেক্ট করে তা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ৩০% দামে দেয়া হবে। এতে করে ভোলার কৃষকরাই বেশি উপকৃত হবে। তাছাড়া ভোলাতে সারকারখানা স্থাপন হলে মাল্টিনেশনাল উপকার হবে। এখানে যদি সারকারখান স্থাপন করা হয় তা হলে এটা একটি উদাহরণ হবে যে, ভোলাতেও কারখানা স্থাপন করা সম্ভব। তবে সারকারখানায় অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী না হলেও এর বাহিরে অনেক লোকের বিভিন্ন কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরী হবে।
আশার কথা হচ্ছে ভোলায় সারকারখানা স্থাপন নিয়ে সরকারের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকে অন্তত ২০টি জেলায় সার সরবরাহ করা হবে। এখানে গোডাউন স্থাপনের মাধ্যমে অন্যত্র থেকে সার এনে মজুদ করা হবে এবং পরবর্তীতে তা বিভিন্ন জেলা সরবরাহ করা হবে।
ভোলার সন্তান যারা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চাকুরী করেছেন এবং কর্মরত আছেন। এবং যারা ভোলাতে চাকুরী করেছেন এমন অনেকের চেষ্টার ফলে ভোলায় সারকারখানা স্থাপন এখন বাস্তবায়নের পথে। যারা এই চেষ্টা সাথে জড়িত ছিলেন তাদের সকলকে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুধু সারকারখানা নয়, ভোলায় মেডিকেল কলেজ, ভোলা-বরিশাল সেতুসহ অন্যান্য দাবী বাস্তবায়নেও কাজ করছে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম।
ভোলা ডেভলপমেন্ট ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম জহিরুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভোলাবাসীর ছোট-বড় সকল মৌলিক ও যৌক্তিক দাবীগুলো বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম। সেই কাজেরই একটা বড় সফলতা পেতে যাচ্ছে ভোলাবাসী। সেটা হলো- দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা পেয়েই সরকার ভোলায় একটি সারকারখানা স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে। খুব দ্রুতই এটা স্থাপন করবে সরকার। শুধু সরকারী উদ্যোগে নয়, বেসরকারীভাবেও অনেক বড় বড় কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে, যেন তারাও ভোলাতে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে যেহেতু কোন সারকারখানা নেই, সেই বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরলে তা আমলে নিয়ে সরকার ভোলার গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ভোলাতে একটি সারকারখানা স্থাপনে সম্মত হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে ভোলাতে গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের মাধ্যমে কোন কোম্পানী কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের লুট-পাট আর চাঁদাবাজীর কারণে ওই সকল কোম্পানীগুলো ভোলাতে তাদের বিনিয়োগ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা আশা করছি সেই সমস্যা এখন আর হবে না। তাই ভোলার গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ভোলা বড় বড় কোম্পানীগুলো তাদের কারখানা স্থাপন করবে। ভোলাবাসীর যে কোন দাবী আদায়ে কাজ করে যাবে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম।
সূত্রে জানা গেছে, ভোলাতে সারকারখানা স্থাপনে জাপান, রাশিয়া, চায়না ও সৌদি আরবে একাধিক কোম্পানী আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভোলাসহ দেশবাসী জানে যে, জাপানী কোম্পানীগুলোর কাজ গুনগত মানে অনেক ভাল। এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে বাংলাদেশে। তাই ভোলায় যে সারকারখানা স্থাপন করতে চাচ্ছে সরকার তা যেন জাপানী কোম্পানী দ্বারাই নির্মাণ হয় সেই দাবী রাখছে ভোলাবাসী।