হামলাটি ছিল নজিরবিহীন। এর পরিকল্পনা হচ্ছিল গোপনে। হামলা শুরুর আগে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল গোটা দুনিয়াকে।
আমেরিকা থেকে রাডার ফাঁকি দেওয়া বোমারু বিমান কীভাবে ইরানে গিয়ে এ হামলা চালিয়েছে, তার বিস্তারিত জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এপি।
বিস্ময় জাগানিয়া অভিযান
ইরানের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূগর্ভস্থ দুটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষেত্রে রবিবার শুরুর সময়ে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা ছোড়েন আমেরিকার পাইলটরা। একে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণকে ব্যাহত করতে চূড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে দেখছেন আমেরিকার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে ইসরায়েল। দেশটি তেহরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংসের জন্য আমেরিকার কাছে পীড়াপীড়ি করছিল।
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আমেরিকার বোমা হামলাকে জোরদার করে সাবমেরিন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির আরেকটি পরমাণু ক্ষেত্রে বেশ কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় সাবমেরিন থেকে।
হামলার অভিযানকে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ আখ্যা দেয় আমেরিকা। দেশটির কর্মকর্তাদের মতে, ‘নির্ভুল আক্রমণের’ পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল। এর মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমকে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মূল্যায়ন চলছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলায় পরমাণু ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। হামলার বদলা নেওয়ার অঙ্গীকারও করে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি।
৪ লাখ ২০ হাজার বিস্ফোরক নিক্ষেপ
আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে উড্ডয়ন করে রাডার ফাঁকি দেওয়া বি-টু বোমারু বিমানগুলো। এগুলো ইরানের মাটিতে ৪ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড বিস্ফোরক ছোড়ে। বিমানগুলোর সঙ্গী ছিল ট্যাংকার ও যুদ্ধবিমানের বহর। এসব যুদ্ধবিমান কিছু অস্ত্র নিক্ষেপ করে।
আমেরিকার কর্মকর্তাদের দাবি, অভ্যন্তরীণ গোলাবর্ষণ শনাক্ত করতে পারেনি ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি রাডার ফাঁকি দেওয়া আমেরিকান বিমানগুলোর দিকে কোনো গুলিও ছুঁড়তে পারেনি।
বিভ্রান্তির পর বিভ্রান্তি
হামলার কয়েক ঘণ্টা পর আমেরিকার কর্মকর্তারা অভিযানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তারা জানান, গোপনীয়তা রক্ষার্থে ইরান অভিযানে বেশ কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কৌশল ও টোপ ব্যবহার করা হয়।
গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির সামরিক নেতৃত্ব ও আকাশ প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে দেয় ইসরায়েল। এর ৯ দিন আগে হামলার পরিকল্পনা সাজাতে থাকে আমেরিকা।
বোমারু বিমানগুলো আকাশে ওড়ার আগে থেকেই অভিযানের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর কৌশলের প্রয়োগ শুরু হয়। পরিকল্পনার কিছু অংশ সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প একটি প্রকাশ্য ঘোষণা দেন।
এতে তিনি জানান, ইরানে হামলার বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। তার এ কথার মাধ্যমে দৃশ্যত আলোচনার সম্ভাবনা জাগলেও তলে তলে চলছিল হামলার প্রস্তুতি।
একটি টোপ ছিল একদল বি-২ বোমারু বিমানকে মিজৌরি থেকে পশ্চিমের দিকে নিয়ে যাওয়া। আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘাঁটির দিকে বিমানগুলোকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল কাঁচা বিমান পর্যবেক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও কিছু গণমাধ্যমের নজর কাড়া।
একই সময়ে দুটি করে বাঙ্কার বাস্টার বোমাবাহী সাতটি বি-২ বিমানকে পূর্ব দিকে ওড়ানো হয়। যোগাযোগ অনেক কম করা হয়, যাতে করে বিষয়টি কারও নজরে না পড়ে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান অব দ্য জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ ড্যান কেইন রবিবারের ব্রিফিয়ে দেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তার ভাষ্য, এ সবকিছু করা হয় ‘কৌশলগত চমক’ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। ওয়াশিংটনে আমেরিকার মুষ্টিমেয় কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ফ্লোরিডায় সেন্ট্রাল কমান্ড সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানতেন না এ পরিকল্পনার কথা।
লোকচক্ষুর আড়ালে ১৮ ঘণ্টা ধরে আকাশে উড়ছিল সশস্ত্র বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমানগুলো। প্রতিটিতে ছিলেন দুজন ক্রু। কারও নজরে না পড়ে যথাসময়ে এগুলো অবতরণ করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে। সেখান থেকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে আকাশযানগুলো।
ইরানে প্রবেশের আগে বি-২ বিমানগুলোর সঙ্গী ছিল রাডার ফাঁকি দেওয়া অন্য কিছু যুদ্ধবিমান ও পুনরুদ্ধার বিমান।