
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ভেজাল বিরোধী অভিযান না থাকায় সৈয়দপুর শহরের প্রায় আটকে পড়া পাকিস্তানি ক্যাম্প, কুলি মহল্লাসহ পাড়ায় পাড়ায় অবাধে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লোমেট মিশ্রিত ললি ও বালিশ নামের শিশু খাদ্য। একইসাথে উৎপাদন করা হচ্ছে চকলেট, আচার,চানাচুর, চিপস, লিচি ও ম্যাংগো জুস এর রকমারি খাদ্য। প্রস্তুতকারকরা তাদের উৎপাদিত ভেজাল শিশু খাদ্য সৈয়দপুরের চাহিদা পুরন করে উত্তরের ৮ জেলায় সরবরাহ করে চলেছেন। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে উঠতি বয়সের শিশু ও যুবকরা।
জানা যায়, চিনি ও স্যাকারিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়িরা তাদের উৎপাদিত শিশু খাদ্যে সোডিয়াম সাইক্লোমেট বা ঘনচিনি ব্যবহার করছেন। সেই সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রং। এসব খাদ্যে পানির সাথে ক্ষতিকর রং, ঘনচিনি, বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভারের সাথে সাইট্রিক এসিড ব্যবহার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোক্তা অধিদপ্তরের এক সদস্য জানায়,ঘনচিনি হলো আখের চিনির চেয়ে ৫০ গুন বেশি মিষ্টি। এই ঘনচিনি শিশুর শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি, লিভার ও পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৮০ ভাগ। এর ফলে সোডিয়াম সাইক্লোমেট খাবারে মেশানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রসাশন তৎপর থাকায় মাঝে মধ্যে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন কারিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল কিন্তু ৫ আগষ্টের পর পুলিশ একেবারেই নিস্ক্রিয় হওয়ায় শহরের প্রায় আটকে পড়া পাকিস্তানি ক্যাম্প সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ওইসব শিশু খাদ্য।
স্থানীয় ব্যবসায়িরা বলেন,শহরের হাতিখানা ক্যাম্পের ভলু, কালাম, মুন্সি ও জাহাঙ্গীরসহ আরো ক’জন বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে ওইসব বিষাক্ত শিশু খাদ্য উৎপাদনের পর রংপুরের ৮ জেলায় বিক্রি করে বনেছেন টোকাই থেকে কোটিপতি। গড়েছেন বহুতল ভবন ও কিনেছেন জমি জায়গা। করেছেন ব্যাংক ব্যালেন্স। অথচ তারা অবৈধ ব্যবসা করতেই ক্যাম্পে বসবাস করছেন। এরকারন হলো ক্যাম্পে থাকা ও বিদ্যুৎ ফ্রি। আর ক্যাম্পে বসবাসকারিরা অসহায় ভেবে অভিযান চালানো হয়না বলে।
তারা আরো বলেন, পানীয় তৈরী করতে প্রয়োজন,বানিজ্য মন্ত্রনালয়, বিএসটিআইসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন। এর সাথে প্রয়োজন পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ প্রধান কর্তৃক ট্রেডলাইসেন্স ও মাননিয়ন্ত্রন ল্যাবসহ থাকতে হবে ক্যামিষ্ট। কিন্তু সৈয়দপুরে যেসব ব্যবসায়ি শিশু খাদ্য উৎপাদন করছেন তাদের ওই ধরনের বৈধ কোন কাগজপত্রই নেই। এর ফলে একদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশু সহ উঠতি বয়সের যুবক, অপরদিকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এইসব ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদনকারিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ভোক্তা অধিদপ্তরের লোকজন ও বিএসটিআই কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে অভিযান চালালে সৈয়দপুর শহর থেকেই কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব।
১৪ জুন শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শহরের কারিহাটি রোডের প্রায় ১২/১৫ টি দোকানে প্রায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ক্ষতিকারক ওইসব শিশু খাদ্য। অনেকে রং বেরংগের শিশু খাদ্য উৎপাদনের পর ওইসব দোকান থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে, রংপুর, বগুড়া সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে। আর তাদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর লেখা রয়েছে মেড ইন ঢাকা। তবে বিএসটিআই এর অনুমোদনের কোন চিহ্ন দেয়া নেই।
বাবুয়া নামের এক ব্যবসায়ি বলেন,হাতিখানা ক্যাম্পে শিশু খাদ্য উৎপাদনকারি ভলুর কারনেই কারিহাটি রোডে ভেজাল শিশু খাদ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। সে মাত্র ৪/৫ বছর আগেও ২ বেলা খেতে পারতো না কিন্তু বর্তমানে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে কোটি টাকার মালিক। শুধু মাত্র মানহীন শিশু খাদ্য উৎপাদন কারিদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার ফলেই ফুটপাত থেকে অনেকেই বর্তমানে কোটি টাকার মালিক।
ক্যাম্পের নেতা মোলাম নামের এক ব্যাক্তি বলেন, বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছেন ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস। ৫ আগষ্টের পর তিনি দেশ পরিচালনা করার সাথে সাথে অবৈধ ব্যবসায়িরা মাথা চারা দিয়েছে। তাদের উৎপাদিত শিশু খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির জেনেও নিজে অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ায় কেউকেই তোয়াক্কা করছেন না। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এখনই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অথবা সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযান প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানতে চাইলে সৈয়দপুরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ জয় ও মেডিকেল বিশেষজ্ঞ মাসুম আল আরেফিন বলেন, ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লোমেট মিশ্রিত খাদ্য শিশুদের পেটে গেলে শিশুদের পেটের মারাত্মক পিড়া সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অচিরেই এসব বিষাক্ত শিশু খাদ্য উৎপাদনকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।
জহুল ইসলাম সৈয়দপুর, থেকে 



















