
ইরানের রাজধানী তেহরান এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এ হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জন হতাহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
হামলার কথা নিশ্চিত করে মধ্যপ্রাচ্যের কসাই খ্যাত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলো ধ্বংস করা। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে, কারণ ইসরাইলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ইসরাইলের জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকেই ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।
এ হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। আর হামলার নিন্দা জানিয়ে, দুই পক্ষকে 'সর্বোচ্চ সংযম' বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ প্রধান অ্যান্তেনিও গুতেরেস ।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানান, আজ ভোররাতে চালানো এই হামলায় ইরানের “ডজনখানেক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে” লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ইরানের কাছে এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা দিয়ে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
[caption id="attachment_4389" align="alignnone" width="300"]
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন[/caption]
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ৬ থেকে ৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও। তবে প্রাথমিকভাবে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
হামলার জেরে ইরান তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে এবং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম।
ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের মারাত্মক হামলায় মূল তেল শোধনাগার এবং জ্বালানি ডিপোগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি এবং এসব ডিপোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি ও তেহরান টাইমস জানিয়েছে, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইরজিসি) কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরাইলি হামলায় ইরানের দুই পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি ও ফেরেদুন আব্বাসি নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলের এই সামরিক অভিযানের পর এবার পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে ‘বিশেষ জরুরি অবস্থা’ জারি করা হয়েছে। সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ভোর ৩টা থেকে “জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু” বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।