ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ছাত্রদলের প্যানেলে শীর্ষ দুই পদেই বহিরাগত! তৃণমূলে অসন্তোষ Logo মাঠে ময়লার ভাগাড় থাকায় খেলাধুলা বন্ধ পাঁচ বছর; ওয়াসব্লকে ছাগলের খামার! Logo তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল Logo বিএনপিতে ফেরায় সংবর্ধিত হলেন কমেট চৌধুরী Logo ঈশ্বরদীতে ক্ষুধায় বাবা মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবার চাওয়া সাগরের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান Logo জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী

এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনে কতটা প্রস্তুত ইসি?

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন

এখন থেকে দশ মাস পর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো একটি দিনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই ঘোষণার পর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে- এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে কতটা প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন?

নির্বাচনের আগে দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকা, আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কার এবং তফসিল ঘোষণাসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে হবে কমিশনকে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অতীতে সাধারণত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের অন্তত দেড় বছর আগে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে ইসি।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমা অনুসারে এবার সময় আছে কম-বেশি দশ মাস।

তবে, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানের মাছউদ  বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় যে সময়সীমা দেয়া হয়েছে তার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত আছে কমিশন।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা, কাজেই তাকে তো প্রস্তুতি নিতেই হবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সময় কিছুটা কম হলেও এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলছেন, “এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে অসম্ভব নয়।”

নির্বাচনের আগে কমিশনের কর্মযজ্ঞ

জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আগেভাগেই শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে তফসিল ঘোষণার আগেই যা সম্পন্ন করে ইসি। সে পরিকল্পনাই থাকে নির্বাচনি রোডম্যাপে।

যেখানে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা, ব্যালট পেপার প্রস্তুত, নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগের মতো কাজ সম্পাদনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা যুক্ত থাকে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন নির্বাচন কমিশনও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজও শুরু করেছে।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “ঐকমত্য কমিশনেরও যেমন কাজ চলছে, আমরা আমাদের প্রস্তুতি রাখবো। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে, সেটি হলো ভোট হবে। আগাম প্রস্তুতি নিতেই হবে আমাদের।”

তিনি জানান, “চলমান পদ্ধতির ধারাবাহিকতায় অনেক সরঞ্জাম দরকার ছিল সেটা আমরা সংগ্রহ করেছি।”

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

“আমরা ব্যালট বাক্স, কালি, স্টাম্প প্যাড, এই জিনিসগুলোর জন্য টেন্ডারিং প্রসেসে গিয়েছি। এটার জন্য টাকা লাগবে, সেই বাজেট বরাদ্দ আমরা চেয়েছি।”

“এখন রোডম্যাপ প্রকাশের মতো সময় এসেছি কি-না আমরা জানি না। তবে, প্রাথমিকভাবে যে সব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেটি আমরা নিচ্ছি,”  বলেন আখতার আহমেদ।

২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে যা বলছে কমিশন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক বৈঠকও করছে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচনপূর্ব বেশ কিছু কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনও।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানের মাছউদ  বলছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে- প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার পর থেকেই কমিশন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

“ইলেকশন কমিশন তো ডিসেম্বর থেকেই প্রস্তুত”, বলেন আব্দুর রহমান মাছউদ।

শুক্রবার জাতীর উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে, নেবে–– বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা একটা বাস্তবায়নকারী সংস্থা। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাজ মেহমান আপ্যায়নের মতো। যদি আপনি আমার বাসায় আসেন, দুপুরে খাবেন, দুপুর বলতে কিন্তু তিনটা, সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হইতে পারে। বাড়িওয়ালা কিন্তু ১২টা থেকেই প্রস্তুত থাকবে।”

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কাজটি সময়সাপেক্ষ হলেও এরই মধ্যে নোটিফিকেশন দিয়েছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানের মাছউদ বলছেন, “প্রধান উপদেষ্টার আগের ঘোষিত সময় অনুযায়ীই আমরা অলরেডি প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন আয়োজন, কমিশনের প্রথম কাজই এইটা।”

“যে টাইম এখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় দিয়েছেন এই সময়ের মধ্যে আমরা প্রস্তুত আছি এবং প্রস্তুত হয়ে যাব,” বলছিলেন  মাছউদ।

জাতীয় সংসদ ভবন

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব?

অতীতে বেশিরভাগ সময় জাতীয় নির্বাচনের অন্তত দেড় বছর আগে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে ইসি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা আসলেও এখনো রোডম্যাপ দেয়নি নির্বাচন কমিশন।

তাই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে নির্বাচন আয়োজনের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ এই সময়ের মধ্যে গুছিয়ে নেয়া সম্ভব হবে কিনা।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ইসির সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলী  বলেন, “ইলেকশন কমিশনের সামনে অনেকগুলো কাজ রয়েছে। যার মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের মতো কাজগুলো সময়সাপেক্ষ।”

এই বিশ্লেষক বলছেন, ভোটার তালিকার ওপর নির্বাচনের বড় একটি প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। কেননা ভোটার তালিকার ওপর নির্ভর করেই ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি, সীমানা চূড়ান্তসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক বড় প্রস্তুতি নিতে হয়।

তবে এই কাজগুলো শেষ করে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলেই মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম।

তার মতে, “বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, অসম্ভব নয়”।

তিনি বলছেন, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকার এরই মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপের কাজটি সেরেছে।

যা নতুন করে আর না করলেও চলবে বলেই মনে করেন আব্দুল আলীম।

তিনি বলছেন, “সংলাপের বিষয়টি নির্বাচনি রোডম্যাপের মধ্যেও থাকে। আমি মনে করি, আলাদা করে সংলাপ আর না করলেও চলবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কিছুটা সময় হাতে পাবে”।

তবে নির্বাচন কমিশনকে খুব ‘অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড’ হতে হবে বলেও মনে করেন আব্দুল আলীম।

তবে আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

তিনি বলেন, “যেহেতু একটা আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে থাকতে পারছে না কাজেই তারা যে একদম চুপ করে বসে থাকবে এটা ভাবার কোনো কারণ নাই। একই সঙ্গে প্রশাসনে এখনো অনেক দলীয় লোকজন আছে”, বলছিলেন আব্দুল আলীম।

বিশেষজ্ঞরা মনে করে, “এগুলো সম্ভব সবই, তবে সেভাবে উদ্যোগ নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে।” সরকারকে সহায়তা করে সবাইকে কাজ করতে হবে।

পরিস্থিতি সামলাতে সরকারকে একটি সমন্বিত নির্বাচনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে কেবল ইলেকশন কমিশন নয়, সরকার এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে বলেই মনে করেন তারা। বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাত্রদলের প্যানেলে শীর্ষ দুই পদেই বহিরাগত! তৃণমূলে অসন্তোষ

এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনে কতটা প্রস্তুত ইসি?

Update Time : ০৮:২৭:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

এখন থেকে দশ মাস পর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো একটি দিনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই ঘোষণার পর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে- এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে কতটা প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন?

নির্বাচনের আগে দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকা, আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কার এবং তফসিল ঘোষণাসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে হবে কমিশনকে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অতীতে সাধারণত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের অন্তত দেড় বছর আগে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে ইসি।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমা অনুসারে এবার সময় আছে কম-বেশি দশ মাস।

তবে, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানের মাছউদ  বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় যে সময়সীমা দেয়া হয়েছে তার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত আছে কমিশন।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা, কাজেই তাকে তো প্রস্তুতি নিতেই হবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সময় কিছুটা কম হলেও এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলছেন, “এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে অসম্ভব নয়।”

নির্বাচনের আগে কমিশনের কর্মযজ্ঞ

জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আগেভাগেই শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে তফসিল ঘোষণার আগেই যা সম্পন্ন করে ইসি। সে পরিকল্পনাই থাকে নির্বাচনি রোডম্যাপে।

যেখানে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা, ব্যালট পেপার প্রস্তুত, নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগের মতো কাজ সম্পাদনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা যুক্ত থাকে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন নির্বাচন কমিশনও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজও শুরু করেছে।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “ঐকমত্য কমিশনেরও যেমন কাজ চলছে, আমরা আমাদের প্রস্তুতি রাখবো। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে, সেটি হলো ভোট হবে। আগাম প্রস্তুতি নিতেই হবে আমাদের।”

তিনি জানান, “চলমান পদ্ধতির ধারাবাহিকতায় অনেক সরঞ্জাম দরকার ছিল সেটা আমরা সংগ্রহ করেছি।”

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

“আমরা ব্যালট বাক্স, কালি, স্টাম্প প্যাড, এই জিনিসগুলোর জন্য টেন্ডারিং প্রসেসে গিয়েছি। এটার জন্য টাকা লাগবে, সেই বাজেট বরাদ্দ আমরা চেয়েছি।”

“এখন রোডম্যাপ প্রকাশের মতো সময় এসেছি কি-না আমরা জানি না। তবে, প্রাথমিকভাবে যে সব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেটি আমরা নিচ্ছি,”  বলেন আখতার আহমেদ।

২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে যা বলছে কমিশন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক বৈঠকও করছে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচনপূর্ব বেশ কিছু কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনও।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানের মাছউদ  বলছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে- প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার পর থেকেই কমিশন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

“ইলেকশন কমিশন তো ডিসেম্বর থেকেই প্রস্তুত”, বলেন আব্দুর রহমান মাছউদ।

শুক্রবার জাতীর উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে, নেবে–– বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা একটা বাস্তবায়নকারী সংস্থা। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাজ মেহমান আপ্যায়নের মতো। যদি আপনি আমার বাসায় আসেন, দুপুরে খাবেন, দুপুর বলতে কিন্তু তিনটা, সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হইতে পারে। বাড়িওয়ালা কিন্তু ১২টা থেকেই প্রস্তুত থাকবে।”

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কাজটি সময়সাপেক্ষ হলেও এরই মধ্যে নোটিফিকেশন দিয়েছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানের মাছউদ বলছেন, “প্রধান উপদেষ্টার আগের ঘোষিত সময় অনুযায়ীই আমরা অলরেডি প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন আয়োজন, কমিশনের প্রথম কাজই এইটা।”

“যে টাইম এখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় দিয়েছেন এই সময়ের মধ্যে আমরা প্রস্তুত আছি এবং প্রস্তুত হয়ে যাব,” বলছিলেন  মাছউদ।

জাতীয় সংসদ ভবন

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব?

অতীতে বেশিরভাগ সময় জাতীয় নির্বাচনের অন্তত দেড় বছর আগে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে ইসি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা আসলেও এখনো রোডম্যাপ দেয়নি নির্বাচন কমিশন।

তাই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে নির্বাচন আয়োজনের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ এই সময়ের মধ্যে গুছিয়ে নেয়া সম্ভব হবে কিনা।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ইসির সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলী  বলেন, “ইলেকশন কমিশনের সামনে অনেকগুলো কাজ রয়েছে। যার মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের মতো কাজগুলো সময়সাপেক্ষ।”

এই বিশ্লেষক বলছেন, ভোটার তালিকার ওপর নির্বাচনের বড় একটি প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। কেননা ভোটার তালিকার ওপর নির্ভর করেই ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি, সীমানা চূড়ান্তসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক বড় প্রস্তুতি নিতে হয়।

তবে এই কাজগুলো শেষ করে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলেই মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম।

তার মতে, “বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, অসম্ভব নয়”।

তিনি বলছেন, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকার এরই মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপের কাজটি সেরেছে।

যা নতুন করে আর না করলেও চলবে বলেই মনে করেন আব্দুল আলীম।

তিনি বলছেন, “সংলাপের বিষয়টি নির্বাচনি রোডম্যাপের মধ্যেও থাকে। আমি মনে করি, আলাদা করে সংলাপ আর না করলেও চলবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কিছুটা সময় হাতে পাবে”।

তবে নির্বাচন কমিশনকে খুব ‘অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড’ হতে হবে বলেও মনে করেন আব্দুল আলীম।

তবে আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

তিনি বলেন, “যেহেতু একটা আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে থাকতে পারছে না কাজেই তারা যে একদম চুপ করে বসে থাকবে এটা ভাবার কোনো কারণ নাই। একই সঙ্গে প্রশাসনে এখনো অনেক দলীয় লোকজন আছে”, বলছিলেন আব্দুল আলীম।

বিশেষজ্ঞরা মনে করে, “এগুলো সম্ভব সবই, তবে সেভাবে উদ্যোগ নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে।” সরকারকে সহায়তা করে সবাইকে কাজ করতে হবে।

পরিস্থিতি সামলাতে সরকারকে একটি সমন্বিত নির্বাচনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে কেবল ইলেকশন কমিশন নয়, সরকার এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে বলেই মনে করেন তারা। বিবিসি