
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, "আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।"
তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে সেটি আপনারাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।”
তিনি বলেন, "আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যত। জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।”
ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত 'তারুণ্যের সমাবেশে' ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিচ্ছিলেন মি. রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, "গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চাইলে পদত্যাগ করে এসে নির্বাচন করুন। নির্বাচনে জনগণের রায় পেলে সরকারের দায়িত্ব পালন করুন।”
নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পুঁজি বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
“তাদের প্রতি আহ্বান ও পরামর্শ- জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তবর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না,” বলছিলেন তিনি।
মি. রহমান বলেন তিন কোটি ভোটার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
“অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্ববাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে। প্রতিক্ষেত্রেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসে জাতীয় নির্বাচন সফল করেছে। বাংলাদেশেই রেকর্ড আছে নির্বাচন তিন মাসে সম্ভব। কিন্তু আজ দেখছি দশ মাস হয়ে গেলো অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না,” বলেছেন তিনি।
“কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হবে,” এটি উল্লেখ করে সেই নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকার সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় তারেক রহমান বলেছেন, "আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি করেছে সেটি সেই স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তির ঘটনাই আমরা দেখতে পাচ্ছি।"
“পলাতক স্বৈরাচারের সময় দেখেছি তারা কীভাবে আদালত ও আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা বাধা তৈরি করেছে তার মধ্যে স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি,” বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, আদালতের নির্দেশ যারা অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে কতটা সংস্কার আশা করতে পারি?”
“পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তি মানসিকতার সংস্কার জরুরি। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি,” বলেন তিনি।
গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের সব সিটি মেয়রকে অপসারণ করা হয়। এমন অবস্থায় গেল ২৭শে মার্চ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল।
এরপর ২৭শে এপ্রিল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
একইদিন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে লিগ্যাল নোটিশ দেন দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ ও ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
কিন্তু সরকার তাকে শপথ না পড়ানোর কারণে তার সমর্থকরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন।
পরে গত ১৪ই মে বিএনপির এই নেতাকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়। ২২শে মে রিট খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
এই রায়ের ফলে ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়তে কোনো বাধা নেই।
ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্টিত 'তারুণ্যের সমাবেশে' দেয়া বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন একটি স্লোগান দিয়েছেন।
তিনি তার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে স্লোগানটি দেয়ার আগে দলীয় নেতাকর্মী ও দেশের মানুষকে এটি শুনতে এবং এরপর স্লোগানটি উচ্চারণের আহ্বান জানান।
“আপনাদের সামনে একটি ছোট্ট স্লোগান তুলে ধরতে চাই, দয়া করে মন দিয়ে সবাই শুনবেন। প্রথমে আমি স্লোগানটি বলবো, মন দিয়ে শুনবেন। এরপর আমি বলবো তখন আপনার সবাই বলবেন,” বলছিলেন তিনি।
তিনি এরপর বলেন, "দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ... সবার আগে বাংলাদেশ"।
এরপর তিনি সবাইকে এই স্লোগান দেয়ার আহ্বান জানান। এর পর তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।