
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক করার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি জানিয়েছে, বিশৃঙ্খলা এড়াতে তারা শেখ হাসিনার সময়ে হওয়া সব জাতীয় নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা’র দাবি জানিয়েছে আজ।
এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনার আমলে হওয়া জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সকল নির্বাচনকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে বলেছি। কারণ সেই সময়টায় শেখ হাসিনা একটা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় ইলেকশন করেছিলো। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিলো। রাতের ভোট হয়েছে, ডামি প্রার্থীর ভোট হয়েছে। ফলে, সেই নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেই সময়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও ওগুলোকে বিভিন্নভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে… তাই, পূর্বের নির্বাচনগুলোকে আইনগতভাবে যেন অবৈধ ঘোষণা করা হয়।”
এরপর এই এনসিপি নেতা বলেন যে তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
তাই, নাগরিক সেবার নিশ্চিত ও নাগরিক দুর্ভোগ কমানোর জন্য “ইলেকশন কমিশন পুনর্গঠন করে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন” আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
পাশাপাশি, তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ‘জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কার বা জুলাই সনদ ঘোষণা, গণপরিষদ বা আইনসভা নির্বাচনের’ জন্য সমন্বিত রোডম্যাপও সরকারের কাছে চেয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম জানান যে আগামী জুলাই মাসের মাঝেই জুলাই সনদ আসতে পারে, তাদেরকে এমনটাই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
“আমরা বলেছি, বিচারটাও কবে শেষ হবে, কোন প্রক্রিয়ায় আগাবে এবং ডিসেম্বর থেকে জুনের মাঝে যে নির্বাচন হওয়ার কথা, সেটিও কোন প্রক্রিয়ায় আগাবে, এগুলো আলোচনা হয়েছে।”
“সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, ৩০ দিনের মাঝে জুলাই ঘোষণাপত্র হবে। নির্ধারিত সময়ের মাঝে যেন জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয়, সে বিষয়ে আমরা আহ্বান জানিয়েছি এবং সরকারের, ড. ইউনূস স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
“জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীর গতিতে আগাচ্ছে। যে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল, তা এখনও অনেক শহীদ পরিবার পায়নি। মাসিক ভাতাও শুরু হয়নি। আমরা বলেছি যে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসনের যে প্রতিশ্রুতিগত দাবি, তা যেন নিশ্চিত করা যায়,” বলেন নাহিদ।
এক পর্যায়ে তাকে বিএনপি’র তরফ থেকে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি বলেন, “স্পষ্টভাবে বলেছি, ছাত্র উপদেষ্টাদের সাথে এনসিপির সম্পর্ক নেই। ছাত্র উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেসাবে সরকারে গিয়েছেন, সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। ফলে তাদের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের বা এনসিপির সম্পর্ক নাই। আজ সকালেও তা পরিষ্কার করেছি।”
“বরং, গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আকারে তারা গিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করছে। সেখানে তাদেরকে হেয় করা, তাদেরকে অপমান করা, এ বিষয়ে আমরা নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের সাথে তাদেরকে জড়িয়ে, ট্যাগ দিয়ে পদত্যাগ করতে বলাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক,” যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা’র বিষয়ে এনসিপি’র অবস্থান সম্বন্ধে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা বলেছি— উনি যাতে দায়িত্বে থাকেন। দায়িত্বে থেকে আলোচনার মাধ্যমে সকল পক্ষের সকল সমস্যা সমাধান করেন। কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জনগণ ও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, তাদের আহ্বানেই তিনি দায়িত্বে এসেছিলেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি কমিটেড। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি উনি কমিটেড না। উনি যেন এ বিষয়টা যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেন।”
সরকার কেন এনসিপিকে ডেকেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, “বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা নিয়ে আলোচনা করতে। এই পরিস্থিতিতে উনি কাজ করতে পারছেন না। উনি দায়িত্ব ছেড়ে দেদিবেন কিনা। এ বিষয়ে ওনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই ওনার সাথে আজকের এই বৈঠক।”
“সরকার বা ড. ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করেছেন, কারণ যেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে উনি দায়িত্বে এসেছেন… সেসময় আমরা উনাকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য আহ্বান করেছিলাম… সকলেই জনগণের কাছে নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি।”
“সেই প্রতিশ্রুতি থেকে কোনো কোনো পক্ষ সরে আসছে বলে মনে করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওনাকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন দাবি আদায়ের চেষ্টা চলছে। এর ফলে এইভাবে ওনার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় এবং সংস্কার বা পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সেই জায়গা থেকে উনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন।”
তিনি বলেন, এনসিপি’র তরফ থেকে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূস যেন “কোনো রাজনৈতিক দল নয়, গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতি কমিটেড থাকেন।”
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















