জোবায়দুল হক রাসেল।বাবা বিচারপতি জহিরুল হক।পৈত্রিক নিবাস পটুয়াখালীর বাউফলে।
শৈশব কৈশোর কেটেছে মতিঝিল আরামবাগে। নাজমা মেটালের গলিতে।
বাবা ছিলেন বটতলার উকিল। রাসেল ছাত্রলীগে যোগ দেয় ৯৪/৯৫ তে। ৯৬ তে দল ক্ষমতায় এলে ছাত্রলীগের বড় নেতা বনে যান। এইচএসসি পড়েন মালিবাগের আবুজর গীফারি কলেজে। সেই সুবাদে ঘনিষ্ঠতা হয় আশরাফ তালুকদারের সাথে। আশরাফ তালুকদার ছিলেন সাবের চৌধুরীর ব্লকের। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি।
এজিবি কলোনীর টিপু হত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এই আশরাফ তালুকদার রাসেলকে তুলে দেন সাবের চৌধুরীর হাতে। সাবের চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে নিয়মিত সুন্দরী নারীদের নিয়ে যেতে শুরু করেন রাসেল। কলেজ জীবন থেকেই রাসেল নারীতে আসক্ত। এই অভ্যাসটা পরে ব্যবসায় রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা আর ব্যবসায়ীরা ছিলো রাসেলের ক্লায়েন্ট।

সবচাইতে বড় ক্লায়েন্ট ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের নিয়মিত আসতেন রাসেলের সেগুনবাগিচার অফিসে। ওই অফিসে সবসময় দামী দামী বিদেশী মদ আর সুন্দরী কলেজ গার্লরা থাকতো। আর নগদ টাকায় কেনা ওই অফিসটা ছিলো মূলত সড়ক ও সেতু বিভাগের ঠিকাদারদের তদবীরের জায়গা। ওবায়দুল কাদেরকে সন্তুষ্ট করে ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে দিতো রাসেল। এভাবে সে শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়।
ওবায়দুল কাদের আর সাবের চৌধুরীর হাত ধরে রাসেল ঘনিষ্ঠ হয় শেখ হাসিনার সাথে। শেখ হাসিনা তাকে শেখ রাসেল বলে ডাকতেন। গণভবনে রাসেলের প্রবেশ করতে কোন পাস লাগতোনা। শেখ হাসিনাকে দিয়ে বাবা জহিরুল হককে বটতলার উকিল থেকে হাইকোর্টের বিচারপতি বানান। গণভবনে অবাধ বিচরণ আর শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে তদবীর বানিজ্য করে লুটে নেন কোটি কোটি টাকা। নিয়মিত আরামবাগে ক্লাবে জুয়া খেলতেন রাসেল। এসব করে প্রচুর টাকা আয় করেন রাসেল।
ওবায়দুল কাদেরের মতো রাঘব বোয়াল নেতাদের মনোরঞ্জন করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেন । নিজ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচন করে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও হেরে গেলে শেখ হাসিনা রেগে তাকে গণভবন থেকে বের করে দেন।
তাতে কি।ওবায়দুল কাদের, আশরাফ তালুকদার, সাবের চৌধুরীসহ বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতাদের তুষ্ট করে সম্পদের পাহাড় গড়েন রাসেল। পাবলিক হেলথ এর প্রধান প্রকৌশলি নুরুজ্জামানও বেশ তোয়াজ করতেন রাসেলকে। দল চালানোর নামে প্রকৌশলী নুরুজ্জামান রাসেলকে কোটি কোটি টাকা তো দিতেনই সেই সাথে যত তদবীর ছিলো সব শুনতেন বিনা বাক্যব্যয়ে। এভাবে পাবলিক হেলথ এর সব টেন্ডার ও নিয়োগে নিজের পছন্দমতো লোক ঢুকিয়ে রাসেল হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার ক্ষমতার পুরোটা সময় রাসেল অবৈধভাবে থেকেছেন মিন্টো রোডের মিনিস্টার এপার্টমেন্টে। ৫ আগস্ট ওবায়দুল কাদেরের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে শেষ কলটি ছিলো জোবায়দুল হক রাসেলের।
গুঞ্জন আছে ওবায়দুল কাদেরের সাথে এখনো নিয়মিত যোগাযোগ আছে রাসেলের। আর ওবায়দুল কাদেরের লুটের টাকাও কিছু গচ্ছিত আছে রাসেলের কাছে। "ইভিএম মেশিনে যে যেই মার্কায় ভোট দেননা কেন তথ্য চলে আসবে আমাদের কাছে" একথা বলে দেশব্যাপী ভাইরাল হন রাসেল। হন প্রচুর সমালোচনার পাত্র। ওবায়দুল কাদেরের সরাসরি হস্তক্ষেপে মিডিয়া বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।