ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল Logo বিএনপিতে ফেরায় সংবর্ধিত হলেন কমেট চৌধুরী Logo ঈশ্বরদীতে ক্ষুধায় বাবা মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবার চাওয়া সাগরের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান Logo জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি
স্থায়ী কমিটির বৈঠক

নির্বাচনের দিনক্ষণ আদায়ে রাজপথে নামার পরিকল্পনা বিএনপির

 

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করাকে রহস্যজনক বলছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে। তাই সরকারকে চাপে রাখতে নতুন কৌশলে এগোনোর পরিকল্পনা করছে দলটি।

সংঘাত ও সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনাও সাজাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মিত্র দলগুলোও সংহতি জানিয়ে একই কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে। যা নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ ক্ষমতায় থাকতে নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নানা পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন।

নীতিনির্ধারকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব ও কোনো বড় ঘটনাকে আড়াল করতে এসব আন্দোলনে সরকারের ওই অংশের ইন্ধন রয়েছে। তাদের এ চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে। এমন শঙ্কা থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের স্প্রিট ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামতে চায় দলটি। কী ধরনের কর্মসূচি করা যায়-তা নিয়ে আলোচনাও চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, রাজপথে আন্দোলনে নামার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে নানা বক্তব্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। একটি আন্দোলনে জামায়াত, এনসিপি, হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনও ছিল। তবে বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকারকে বিব্রত করার মতো কোনো কর্মসূচি দেয়নি। বিএনপি ও তার মিত্ররাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবিতে কর্মসূচি দিতে পারে। ওই নেতার মতে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাকে কেন্দ্র করে যদি শাহবাগ, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, মৎস্যভবন সড়কে অবস্থান নেওয়া হয়, তাহলে সরকার তখন কী করবে? অবশ্যই সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। কিন্তু সেই পথে তারা যেতে চান না। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত দেখে পথ চলতে চান। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানাতে চান। বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান। সেক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে। বিএনপি যদি সঠিকভাবে চাপ তৈরি করতে পারে সেই বাধাও কেটে যাবে।

এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে ইতোমধ্যে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে অনুসরণ করে একই সুরে বক্তব্যে দিতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এমন কোনো অহেতুক বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া যাবে না, যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা-আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভেবেচিন্তে নিতে হবে। আন্দোলন যদি সংঘর্ষে পরিণত হয়, তাহলে তৃতীয় কোনো শক্তি তা কাজে লাগাতে পারে। আবার নীরব থাকার ফলে তারা রাজনৈতিক গতি ও বক্তব্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে।

সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে দেখেছি একটা ইস্যু দিয়ে আরেকটি ইস্যুকে চাপা দিতে। এই সরকারও সেই পথে আছে। এতে করে তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটি শঙ্কা কাজ করছে। এখন আবার আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল শুরু করেছে। পরপর ঘটনাগুলো একটি গভীরতর সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়। যা অবিলম্বে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ফিরে না আসা পর্যন্ত সমাধান করা যাবে না।

গত শনিবার রাতে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। জনগণের কাছে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবেলা করা সহজ হবে না। একই দিন বিকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে খুলনায় এক সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক?’

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণসহ বিদেশে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তিনি এ-ও বলেছেন, কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও তরুণদের দল এনসিপি নেতাদের বক্তব্য এবং দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে ধোঁয়াশা ও নানা শঙ্কা দেখা দেয়। সর্বশেষ সরকারের তরফ থেকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করার পর সেই শঙ্কা আরো বেড়েছে। এ নিয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সূত্রমতে, বৈঠকে নেতারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার ব্যর্থ হলে অথবা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না করলে গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ বিরাজনীতিকরণ বা তাদের মদদপুষ্ট কোনো একটি ‘কিংস পার্টিকে’ প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। এই চেষ্টা যাতে সফল না হয়, সেজন্য করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নেতারা নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। তবে, সেই আন্দোলন কোনো অবস্থায় যাতে সংঘাতের দিকে না যায় সেই ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।

বিএনপিসহ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের পরিকল্পনা ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে প্রয়োজন হলে রাজপথের আন্দোলনে নামবেন। আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী দুই মাস সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে, আর তার মাধ্যমেই দল আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসাবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যে সমাবেশ রয়েছে সেসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলের তরুণ কর্মীদের মাঠে নামানো হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ও খুলনায় বিশাল সমাবেশ শেষ করেছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ উদ্যোগে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বগুড়া ও ঢাকায়ও সমাবেশ হবে। সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশে বড় ধরনের লোকসমাগম করা হবে। ঢাকার সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল

স্থায়ী কমিটির বৈঠক

নির্বাচনের দিনক্ষণ আদায়ে রাজপথে নামার পরিকল্পনা বিএনপির

Update Time : ০১:১৫:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

 

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করাকে রহস্যজনক বলছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে। তাই সরকারকে চাপে রাখতে নতুন কৌশলে এগোনোর পরিকল্পনা করছে দলটি।

সংঘাত ও সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনাও সাজাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মিত্র দলগুলোও সংহতি জানিয়ে একই কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে। যা নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ ক্ষমতায় থাকতে নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নানা পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন।

নীতিনির্ধারকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব ও কোনো বড় ঘটনাকে আড়াল করতে এসব আন্দোলনে সরকারের ওই অংশের ইন্ধন রয়েছে। তাদের এ চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে। এমন শঙ্কা থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের স্প্রিট ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামতে চায় দলটি। কী ধরনের কর্মসূচি করা যায়-তা নিয়ে আলোচনাও চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, রাজপথে আন্দোলনে নামার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে নানা বক্তব্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। একটি আন্দোলনে জামায়াত, এনসিপি, হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনও ছিল। তবে বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকারকে বিব্রত করার মতো কোনো কর্মসূচি দেয়নি। বিএনপি ও তার মিত্ররাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবিতে কর্মসূচি দিতে পারে। ওই নেতার মতে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাকে কেন্দ্র করে যদি শাহবাগ, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, মৎস্যভবন সড়কে অবস্থান নেওয়া হয়, তাহলে সরকার তখন কী করবে? অবশ্যই সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। কিন্তু সেই পথে তারা যেতে চান না। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত দেখে পথ চলতে চান। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানাতে চান। বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান। সেক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে। বিএনপি যদি সঠিকভাবে চাপ তৈরি করতে পারে সেই বাধাও কেটে যাবে।

এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে ইতোমধ্যে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে অনুসরণ করে একই সুরে বক্তব্যে দিতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এমন কোনো অহেতুক বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া যাবে না, যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা-আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভেবেচিন্তে নিতে হবে। আন্দোলন যদি সংঘর্ষে পরিণত হয়, তাহলে তৃতীয় কোনো শক্তি তা কাজে লাগাতে পারে। আবার নীরব থাকার ফলে তারা রাজনৈতিক গতি ও বক্তব্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে।

সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে দেখেছি একটা ইস্যু দিয়ে আরেকটি ইস্যুকে চাপা দিতে। এই সরকারও সেই পথে আছে। এতে করে তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটি শঙ্কা কাজ করছে। এখন আবার আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল শুরু করেছে। পরপর ঘটনাগুলো একটি গভীরতর সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়। যা অবিলম্বে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ফিরে না আসা পর্যন্ত সমাধান করা যাবে না।

গত শনিবার রাতে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। জনগণের কাছে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবেলা করা সহজ হবে না। একই দিন বিকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে খুলনায় এক সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক?’

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণসহ বিদেশে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তিনি এ-ও বলেছেন, কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও তরুণদের দল এনসিপি নেতাদের বক্তব্য এবং দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে ধোঁয়াশা ও নানা শঙ্কা দেখা দেয়। সর্বশেষ সরকারের তরফ থেকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করার পর সেই শঙ্কা আরো বেড়েছে। এ নিয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সূত্রমতে, বৈঠকে নেতারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার ব্যর্থ হলে অথবা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না করলে গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ বিরাজনীতিকরণ বা তাদের মদদপুষ্ট কোনো একটি ‘কিংস পার্টিকে’ প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। এই চেষ্টা যাতে সফল না হয়, সেজন্য করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নেতারা নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। তবে, সেই আন্দোলন কোনো অবস্থায় যাতে সংঘাতের দিকে না যায় সেই ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।

বিএনপিসহ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের পরিকল্পনা ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে প্রয়োজন হলে রাজপথের আন্দোলনে নামবেন। আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী দুই মাস সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে, আর তার মাধ্যমেই দল আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসাবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যে সমাবেশ রয়েছে সেসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলের তরুণ কর্মীদের মাঠে নামানো হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ও খুলনায় বিশাল সমাবেশ শেষ করেছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ উদ্যোগে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বগুড়া ও ঢাকায়ও সমাবেশ হবে। সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশে বড় ধরনের লোকসমাগম করা হবে। ঢাকার সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করা হবে।