জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এখন পর্যন্ত মোট ১৬৬টি সুপারিশ একত্র করেছে। সেগুলোকে একটি স্প্রেডশিটে তালিকাভুক্ত করে মতামতের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে।
এই ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করবে, যা নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম করবে এবং একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সূচনা করবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
যদিও ঐকমত্যে পৌঁছানোটা সহজ ব্যাপার নয়। প্রথমত, কোন কোন কমিশন থাকা উচিত, তা নিয়ে রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
অনেকে বলছেন- বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল খাত তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য একটি কমিশন থাকা উচিত ছিল। আবার অনেকেই শিক্ষা খাত নিয়ে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন।
বিলম্বে গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঘিরে সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নারীদের আরও বেশি অধিকার দিতে এই কমিশনের সুপারিশে ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থি দলগুলো ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে।
তবুও সংস্কার কমিশনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আশাবাদী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এরই মধ্যে বাস্তবায়িত কিছু পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন প্রক্রিয়া।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের দ্বিতীয় পর্ব ১৫ মের পরপরই শুরু হবে। তবে আগামী আগস্টের মধ্যে একটি সনদ চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যদি এই সময়সূচি অনুযায়ী সবকিছু এগোয়, তাহলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অধ্যাপক ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে (এবং তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না)। তবে এই বিলম্বের কিছু মূল্য ইতিমধ্যেই গুনতে হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করেছে, তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বলই রয়ে গেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও নাজুক।
প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী- জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে সাধারণ দাবি হলো, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
১২ মে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। যে কোনো নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে ইসি।
যদিও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রতি ব্যাপক বিরূপ মনোভাব থাকা সত্ত্বেও দলটির এখনো কিছুটা সমর্থন রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ আরাফাত জোর দিয়ে বলেন, দলটির প্রতি ‘জনগণের ম্যান্ডেট’ ছিল। কিন্তু ‘জিহাদিরা’ সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা (আওয়ামী লীগ) ‘বাংলাদেশে নিজেদের ন্যায্য স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য লড়বে’।
ক্ষমতার বাইরে থাকলেও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এখনো দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হতে পারে।