ঢাকা ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত
ভারত-পাকিস্তান সংকট

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বণিজ্যে

পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে বাংলাদেশ। দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

বিবৃতিতে দুই দেশকে শান্ত ও সংযত থাকা এবং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ মনে করে, “আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে।”

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়। তাই বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।

তারা মনে করেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বণিজ্যে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা না কমলে দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। এই অঞ্চলকে ঘিরে বিশ্বের শক্তিগুলো যদি সরাসরি অবস্থান নেয়, তাতে বাংলাদেশের জন্য আরো জটিলতা তৈরি হবে বলেও মনে করেন তারা।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার সম্ভাব্য প্রভাব জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম বলেন, ” হয়তো ঢাকার রাস্তায় ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে কিছু মানুষ। কিছু ইসলামি দল মিছিল করতে পারে। কিন্তু দেশে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ কোনো পক্ষ নেবে না বলেই আমার ধারণা। আর এখানে যারা এটা নিয়ে রাস্তায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে, তাদের সতর্কতার সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা শন্তির পক্ষে।”

তার  কথা, “যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এখানেবৃহৎ শক্তির খেলা হওয়ার আশঙ্কা আছে।  চীন একটি পক্ষ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রও একটি পক্ষ নেবে। ইসরায়েল তো তার অবস্থান এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে।  ভারত ও পাকিস্তানও তখন চাইবে বাংলাদেশও তার অবস্থান প্রকাশ  করুক। কিন্তু বাংলাদেশকে এসব ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট থাকতে হবে। কোনো পক্ষ নেয়া যাবেনা।”

“আরো বড় যুদ্ধ শুরু হলে এখানে অস্ত্র বিক্রি হবে। দুই দেশের কাছেই অস্ত্র বিক্রি হবে। এখানে অ্যামেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে, চীন করবে। ফলে এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। সকালে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের খবরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষসহ সব মহলই তো এক ধরনের উদ্বেগ অনুভব করছে। এক ধরনের অস্থিরতা তো শুরুই হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর। ওই দুই দেশের ওপর পড়বে, বাংলাদেশের ওপরও পড়বে,” বলেন তিনি।

“যেমন, ভারত সীমান্তে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে। তার একটা প্রতিক্রিয়া তো আছে। আমাদের সীমান্তে রেড অ্যালার্ট কেন?”

অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস)-এর পরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, “এর দুই ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। বাংলাদেশের স্বাভাবিক ব্যবসা -বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আমরা এখন পাকিস্তান থেকেও আমদানি বাড়িয়েছি। এখন জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হবে। এবং ভারতের সাথে যে বাণিজ্য আমাদের, তা প্রধানত স্থল ও জল পথে হয়ে থাকে। পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে বলেছে। এখন যদি তারা ভারতের গুজরাটসহ অর্থনৈতিক হাবগুলোতে হামলা চালায়, তাহলে ভারতের সথেও আমাদের বাণিজ্যে কিছুটা হলেও বাধা তৈরি হবে। আমাদের রপ্তানিও বাধার মুখে পড়তে পারে। আমরা দুই দেশ থেকেই শিল্পের কাঁচামাল আনি । বিশেষ করে, পোশাক এবং ওধুধ শিল্পের জন্য। ফলে এখানে  শিল্প উৎপদনের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।”

তার কথা, “এরই মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইন্স তার রুট পাল্টেছে। এখানে বড় সমস্যা হবে আকাশ ও সমুদ্র পথ নিয়ে। সেটা যদি হয়, তাহলে কিন্তু অন্য দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটের আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তা তো বটেই, এরই মধ্যে এই অঞ্চলেই অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে।”

“তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে। কারণ, পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম ৬০ দিন। এখন সমুদ্র, আকাশ পথ পরিবর্তন করতে হলে লিড টাইম তো বেড়ে যাবে। আমাদের এখনই এই বিষয়ে ভাবা উচিত,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের প্রথম প্রভাব হলো মনস্তাত্বিক। সেই প্রভাব তো শুরু হয়ে গেছে। আমাদের পাশে দুইটি দেশে যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়বে। অনেকেই হয়তো খেয়াল করে না, ভারতে কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানি আমাদের কম নয়। আবার পাকিস্তানের সাথেও আমাদের ব্যবসা আছে। আমরা দুই দেশ থেকেই তুলা আনি, সুতা আনি। সেটা বাধার মুখে পড়লে আমাদের তৈরি পোশাক উৎপাদনও তো ক্ষতির মুখে পড়বে।”

“এই দুই দেশ ছাড়াও যদি আকাশ ও সমুদ্র পথে বাধা তৈরি হয়, তাহলে তো বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হবে। আর ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিশ্বের শক্তিগুলো যদি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কোনোভাবে, তাহলে কী পরিস্থিতি হবে ভাবাই যায় না,” বলেন তিনি।

তার কথা, “আমাদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর কী কী প্রভাব পড়তে পারে তার হিসাব এখনো শুরু হয়নি। তবে সরকারের উচিত হবে এখনই  সব পক্ষকে নিয়ে বসে একটি আগাম হিসাব করা ও প্রস্তুতি নেয়া এবং একই সঙ্গে বিকল্পগুলোও ভেবে রাখা।”

প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য,যোগাযোগ সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করতেও বিনিয়োকারীরা সতর্ক হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

তার কথা, “এটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং নিরাপত্তায়ও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এখানে এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হলো বিশেষ করে ভারত তার প্রভাব দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব কাশ্মীরে হামলার প্রমাণ চাচ্ছে। সরাসরি ইসরায়েল ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যরা কিন্তু এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। তারা হামলার নিন্দা করছে। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে অবস্থান স্পষ্ট হবে।”

“তখন স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে নন-স্টেট অ্যাক্টররাও কাজ করবে।  এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতির ছক বদলে যেতে পারে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়তে পারে,” বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের কথা, “আমার এখনো মনে হয় না এই যুদ্ধ আরো বড় হবে বা এটা খুব প্রলম্বিত হবে। কিন্তু যদি বড় হয়, তাহলে তার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে, বাংলাদেশে পড়বে। এখন পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে যুদ্ধের জন্য দুই দেশের নাগরিকদের যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা নাই।”

“আমার মনে হয়েছে ভারত যেহেতু বলছে কাশ্মিরে হামলায়পাকিস্তান জড়িত, তাই মোদীর কিছু একটা করা দরকার ছিল তার দেশের মানুষকে দেখানোর জন্য। তাই একটা কিছু করেছে। যদিও ভারত এটাকে প্রিসিশন ষ্ট্রাইক বলছে। তারা বলছে, পাকিস্তানে জঙ্গিদের ঘর-বাড়ি ও আস্তানায় হামলা করা হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান সেটা মানছে না। তারা বলছে, জনবসতিতে হামলা হয়েছে। এখন এই টেকনোলজির যুগে সঠিক তথ্য থাকলে প্রিসিশন অ্যাটাক সম্ভব। এখন ভারতের হাতে সেই তথ্য আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।”

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন,” এখন সমস্যা হলো, যদি বড় যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র মারা হয়, দুই দেশই পরমাণু শক্তির দেশ। তখন তো পরিস্থিতি অনেক খারাপ হবে। বড় ক্ষতি হবে অর্থনীতির। সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হবে। বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব পড়বে।”

তিনি মনে করেন,” কাশ্মিরের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটা সমর্থন আছে। যদি বড় যুদ্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রসেশন হতে পারে। তারপরও কাশ্মীরের বিষয়টা যেহেতু বাংলাদেশের বিষয় না, ফলে এখানে বড় আকারের কিছু হবে বলে মনে করছি না। তবে আমরা আশা করি, আমাদের সরকারের দিক থেকে যাতে এমন কিছু বলা না হয়, যাতে আমরা ঝামেলায় পড়ি।”

“তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া বা  আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নাই। কারণ, আমরা কূটনীতিতে সেই দক্ষতা, পেশাদারিত্ব অর্জন করতে পারিনি,” বলেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

ভারত-পাকিস্তান সংকট

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বণিজ্যে

Update Time : ০৫:১১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে বাংলাদেশ। দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

বিবৃতিতে দুই দেশকে শান্ত ও সংযত থাকা এবং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ মনে করে, “আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে।”

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়। তাই বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।

তারা মনে করেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বণিজ্যে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা না কমলে দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। এই অঞ্চলকে ঘিরে বিশ্বের শক্তিগুলো যদি সরাসরি অবস্থান নেয়, তাতে বাংলাদেশের জন্য আরো জটিলতা তৈরি হবে বলেও মনে করেন তারা।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার সম্ভাব্য প্রভাব জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম বলেন, ” হয়তো ঢাকার রাস্তায় ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে কিছু মানুষ। কিছু ইসলামি দল মিছিল করতে পারে। কিন্তু দেশে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ কোনো পক্ষ নেবে না বলেই আমার ধারণা। আর এখানে যারা এটা নিয়ে রাস্তায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে, তাদের সতর্কতার সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা শন্তির পক্ষে।”

তার  কথা, “যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এখানেবৃহৎ শক্তির খেলা হওয়ার আশঙ্কা আছে।  চীন একটি পক্ষ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রও একটি পক্ষ নেবে। ইসরায়েল তো তার অবস্থান এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে।  ভারত ও পাকিস্তানও তখন চাইবে বাংলাদেশও তার অবস্থান প্রকাশ  করুক। কিন্তু বাংলাদেশকে এসব ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট থাকতে হবে। কোনো পক্ষ নেয়া যাবেনা।”

“আরো বড় যুদ্ধ শুরু হলে এখানে অস্ত্র বিক্রি হবে। দুই দেশের কাছেই অস্ত্র বিক্রি হবে। এখানে অ্যামেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে, চীন করবে। ফলে এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। সকালে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের খবরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষসহ সব মহলই তো এক ধরনের উদ্বেগ অনুভব করছে। এক ধরনের অস্থিরতা তো শুরুই হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর। ওই দুই দেশের ওপর পড়বে, বাংলাদেশের ওপরও পড়বে,” বলেন তিনি।

“যেমন, ভারত সীমান্তে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে। তার একটা প্রতিক্রিয়া তো আছে। আমাদের সীমান্তে রেড অ্যালার্ট কেন?”

অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস)-এর পরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, “এর দুই ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। বাংলাদেশের স্বাভাবিক ব্যবসা -বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আমরা এখন পাকিস্তান থেকেও আমদানি বাড়িয়েছি। এখন জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হবে। এবং ভারতের সাথে যে বাণিজ্য আমাদের, তা প্রধানত স্থল ও জল পথে হয়ে থাকে। পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে বলেছে। এখন যদি তারা ভারতের গুজরাটসহ অর্থনৈতিক হাবগুলোতে হামলা চালায়, তাহলে ভারতের সথেও আমাদের বাণিজ্যে কিছুটা হলেও বাধা তৈরি হবে। আমাদের রপ্তানিও বাধার মুখে পড়তে পারে। আমরা দুই দেশ থেকেই শিল্পের কাঁচামাল আনি । বিশেষ করে, পোশাক এবং ওধুধ শিল্পের জন্য। ফলে এখানে  শিল্প উৎপদনের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।”

তার কথা, “এরই মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইন্স তার রুট পাল্টেছে। এখানে বড় সমস্যা হবে আকাশ ও সমুদ্র পথ নিয়ে। সেটা যদি হয়, তাহলে কিন্তু অন্য দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটের আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তা তো বটেই, এরই মধ্যে এই অঞ্চলেই অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে।”

“তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে। কারণ, পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম ৬০ দিন। এখন সমুদ্র, আকাশ পথ পরিবর্তন করতে হলে লিড টাইম তো বেড়ে যাবে। আমাদের এখনই এই বিষয়ে ভাবা উচিত,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের প্রথম প্রভাব হলো মনস্তাত্বিক। সেই প্রভাব তো শুরু হয়ে গেছে। আমাদের পাশে দুইটি দেশে যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়বে। অনেকেই হয়তো খেয়াল করে না, ভারতে কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানি আমাদের কম নয়। আবার পাকিস্তানের সাথেও আমাদের ব্যবসা আছে। আমরা দুই দেশ থেকেই তুলা আনি, সুতা আনি। সেটা বাধার মুখে পড়লে আমাদের তৈরি পোশাক উৎপাদনও তো ক্ষতির মুখে পড়বে।”

“এই দুই দেশ ছাড়াও যদি আকাশ ও সমুদ্র পথে বাধা তৈরি হয়, তাহলে তো বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হবে। আর ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিশ্বের শক্তিগুলো যদি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কোনোভাবে, তাহলে কী পরিস্থিতি হবে ভাবাই যায় না,” বলেন তিনি।

তার কথা, “আমাদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর কী কী প্রভাব পড়তে পারে তার হিসাব এখনো শুরু হয়নি। তবে সরকারের উচিত হবে এখনই  সব পক্ষকে নিয়ে বসে একটি আগাম হিসাব করা ও প্রস্তুতি নেয়া এবং একই সঙ্গে বিকল্পগুলোও ভেবে রাখা।”

প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য,যোগাযোগ সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করতেও বিনিয়োকারীরা সতর্ক হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

তার কথা, “এটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং নিরাপত্তায়ও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এখানে এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হলো বিশেষ করে ভারত তার প্রভাব দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব কাশ্মীরে হামলার প্রমাণ চাচ্ছে। সরাসরি ইসরায়েল ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যরা কিন্তু এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। তারা হামলার নিন্দা করছে। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে অবস্থান স্পষ্ট হবে।”

“তখন স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে নন-স্টেট অ্যাক্টররাও কাজ করবে।  এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতির ছক বদলে যেতে পারে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়তে পারে,” বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের কথা, “আমার এখনো মনে হয় না এই যুদ্ধ আরো বড় হবে বা এটা খুব প্রলম্বিত হবে। কিন্তু যদি বড় হয়, তাহলে তার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে, বাংলাদেশে পড়বে। এখন পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে যুদ্ধের জন্য দুই দেশের নাগরিকদের যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা নাই।”

“আমার মনে হয়েছে ভারত যেহেতু বলছে কাশ্মিরে হামলায়পাকিস্তান জড়িত, তাই মোদীর কিছু একটা করা দরকার ছিল তার দেশের মানুষকে দেখানোর জন্য। তাই একটা কিছু করেছে। যদিও ভারত এটাকে প্রিসিশন ষ্ট্রাইক বলছে। তারা বলছে, পাকিস্তানে জঙ্গিদের ঘর-বাড়ি ও আস্তানায় হামলা করা হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান সেটা মানছে না। তারা বলছে, জনবসতিতে হামলা হয়েছে। এখন এই টেকনোলজির যুগে সঠিক তথ্য থাকলে প্রিসিশন অ্যাটাক সম্ভব। এখন ভারতের হাতে সেই তথ্য আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।”

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন,” এখন সমস্যা হলো, যদি বড় যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র মারা হয়, দুই দেশই পরমাণু শক্তির দেশ। তখন তো পরিস্থিতি অনেক খারাপ হবে। বড় ক্ষতি হবে অর্থনীতির। সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হবে। বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব পড়বে।”

তিনি মনে করেন,” কাশ্মিরের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটা সমর্থন আছে। যদি বড় যুদ্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রসেশন হতে পারে। তারপরও কাশ্মীরের বিষয়টা যেহেতু বাংলাদেশের বিষয় না, ফলে এখানে বড় আকারের কিছু হবে বলে মনে করছি না। তবে আমরা আশা করি, আমাদের সরকারের দিক থেকে যাতে এমন কিছু বলা না হয়, যাতে আমরা ঝামেলায় পড়ি।”

“তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া বা  আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নাই। কারণ, আমরা কূটনীতিতে সেই দক্ষতা, পেশাদারিত্ব অর্জন করতে পারিনি,” বলেন তিনি।