ঢাকা ১০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর

জাতীয় নির্বাচন: দলগুলোর নানা মত, ইসির ডিসেম্বরের প্রস্তুতি

বাংলাদেশের নতুন দল এনসিপি সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের আগে নির্বাচন চায় না৷ বিএনপি তাদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে, নতুন অবস্থান জানিয়েছে জামায়াত৷ তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই তারা প্রস্ততি নিচ্ছে৷

জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়৷ তখন নির্বাচন করা না গেলে এপ্রিলের পর আর যাওয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি৷ একটি ফেব্রুয়ারিতে, মানে রোজার আগে৷ তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না৷ কারণ এরপর কোরবানির ঈদ ও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে৷”

এর আগে তিনি লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফিরে রোজার আগে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন৷ পরে আবার ব্যাখায় বলেন, আগে সংস্কার হতে হবে৷

শুক্রবার ঢাকায় এনসিপি তাদের সমাবেশে বলেছে, আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না৷ অন্যদিকে বিএনপি বার বার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে৷ তা না হলে দলটি আন্দোলনের কথাও বলছে৷

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকবারই বলেছেন যে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ তবে একেবারে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো স্পষ্ট হয়নি৷

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নানা কারণে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর নানা মত, আর অন্তর্বর্তী সরকার সময় নির্দিষ্ট করে না বলায় নানা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ৷

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সবার কথা শুনলে মনে হয় এখন সবকিছুই অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে৷ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আল-জাজিরার সঙ্গে যে সাক্ষাৎকার দিলেন সেখানে তিনি তো বলেই দিলেন জনগণ চায় তিনি আরো কিছুদিন থাকুন৷ এটাতে বোঝা যায় তার নিয়ত খারাপ৷ সম্প্রতি যে রাখাইনে করিডোর দেয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে তার মধ্যেও কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷ উদ্দেশ্য হতে পারে তিনি যে থাকতে চান তার জন্য বৃহৎ শক্তির একটা সমর্থন তিনি পেতেও পারেন৷”

তবে আল-জাজিরার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এটাও বলেছেন যে, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে৷”

তিনি আরও জানিয়েছেন, সময়সীমাটি নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর৷

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব৷ কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না৷’’

বিএনপির সন্দেহ কাটছে না

তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দলটির নেতারা মনে করে সরকার নানা অজুহাতে নির্বাচন পেছাতে চাইছে৷ কিছু রাজনৈতিক দলও নানা স্বার্থে সরকারের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘কোন দল কী চায় তার চেয়ে বড় কথা হলো দেশের মানুষ নির্বাচন চায়৷ তারা ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়৷ দেশে যাতে কেউ নির্বাচন না চায় সেইরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা দেখছি৷ কোনো কোনো গোষ্ঠী এটা নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে৷”

বিএনপির দাবি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে৷ যে যে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো নিয়ে এরইমধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে তারা৷

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘তা করতে সাত দিন লাগে৷ এর বাইরে চিন্তা করা ঠিক না৷ স্বৈরাচার পতনের পর মানুষের এখন চাওয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়া৷ আর সেটার জন্যই দ্রুত নির্বাচন দরকার৷”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এখন দ্রুত নির্বাচন চায়৷ যারা নির্বাচন যথা সময়ে চায় না বা কালক্ষেপণ করতে চায় তারা আসলে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে কথা বলছেন৷ দেশে নির্বাচন যত দেরি হবে জটিলতা তত বাড়বে৷ নানা অপশক্তি তৎপর হবে৷ সরকার তা সামলাতে পারবে না৷”

তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা স্পষ্ট করে বলেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে৷ সংস্কারের ব্যাপারে তার অভিমত রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে সেগুলো নিয়েই কাজ শুরু করা যেতে পারে৷ তাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়৷

‘‘আর যারা বিচার শেষ হওয়ার কথা বলছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নাই৷ এতে অনেক সময় লাগে৷ নির্বাচন কি ততদিন হবে না?,” প্রশ্ন করেন প্রিন্স৷

মৌলিক সংস্কার, বিচারের আগে নির্বাচন চায় না এনসিপি

তবে নির্বাচনে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের একাংশের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি৷ তাদের মতে মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন৷ সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হওয়ার ব্যাপারেও অবস্থান নিয়েছে তারা৷ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আগে নির্বাচন হবে না বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷ তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ করেনি দলটি৷

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্ষমতাকে একমুখি করে রাখা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ এটা ঠিক না করে তো নির্বাচন দিয়ে কোনো লাভ নাই৷”

এনসিপির প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বার্থকে সামনে রেখে সব দলকে ঐক্যমতে আসতে হবে৷ আর এই দায়িত্ব সরকারের৷ সরকারকেই এটা সব দলকে বুঝাতে হবে যে মৌলিক সংস্কার, বিচার আগে দরকার৷ নির্বাচনই অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র কাজ না৷ তাদের সংস্কার ও বিচারকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ বিএনপি চায় না বলে হবে না৷ সেটা তো হতে পারে না৷’’

এনসিপি মনে করে, সবার আগে সংস্কারের রোডম্যাপ দরকার৷ তারপর নির্বাচন৷

‘‘এই কারণে আমরা নির্বাচনের কোনো টাইম ফ্রেম বেধে  দিতে চাই না,’’ বলেন মনিরা শারমিন৷

ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী প্রস্তুত ইসি

নির্বাচন নিয়ে সরকারের দিক থেকে শনিবার ডয়চে ভেলে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি৷ তবে আলাপচারিতায় সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘প্রফেসর ইউনূস বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ তাই হবে৷ তিনি অনড় আছেন৷”

ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলে আসছে নির্বাচন কমিশনও৷ সেক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই এগুচ্ছে তারা৷ নির্বাচন কমিশন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্ততি নিচ্ছে কমিশন৷ কমিশন সেই টার্গেটে সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে৷ তবে নির্বাচনের তফসিল হবে রাজনৈতিক দল ও সরকারের মতামতের ওপর ভিত্তি করে৷’’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় নির্বাচন: দলগুলোর নানা মত, ইসির ডিসেম্বরের প্রস্তুতি

Update Time : ০৮:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

বাংলাদেশের নতুন দল এনসিপি সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের আগে নির্বাচন চায় না৷ বিএনপি তাদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে, নতুন অবস্থান জানিয়েছে জামায়াত৷ তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই তারা প্রস্ততি নিচ্ছে৷

জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়৷ তখন নির্বাচন করা না গেলে এপ্রিলের পর আর যাওয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি৷ একটি ফেব্রুয়ারিতে, মানে রোজার আগে৷ তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না৷ কারণ এরপর কোরবানির ঈদ ও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে৷”

এর আগে তিনি লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফিরে রোজার আগে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন৷ পরে আবার ব্যাখায় বলেন, আগে সংস্কার হতে হবে৷

শুক্রবার ঢাকায় এনসিপি তাদের সমাবেশে বলেছে, আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না৷ অন্যদিকে বিএনপি বার বার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে৷ তা না হলে দলটি আন্দোলনের কথাও বলছে৷

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকবারই বলেছেন যে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ তবে একেবারে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো স্পষ্ট হয়নি৷

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নানা কারণে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর নানা মত, আর অন্তর্বর্তী সরকার সময় নির্দিষ্ট করে না বলায় নানা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ৷

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সবার কথা শুনলে মনে হয় এখন সবকিছুই অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে৷ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আল-জাজিরার সঙ্গে যে সাক্ষাৎকার দিলেন সেখানে তিনি তো বলেই দিলেন জনগণ চায় তিনি আরো কিছুদিন থাকুন৷ এটাতে বোঝা যায় তার নিয়ত খারাপ৷ সম্প্রতি যে রাখাইনে করিডোর দেয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে তার মধ্যেও কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷ উদ্দেশ্য হতে পারে তিনি যে থাকতে চান তার জন্য বৃহৎ শক্তির একটা সমর্থন তিনি পেতেও পারেন৷”

তবে আল-জাজিরার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এটাও বলেছেন যে, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে৷”

তিনি আরও জানিয়েছেন, সময়সীমাটি নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর৷

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব৷ কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না৷’’

বিএনপির সন্দেহ কাটছে না

তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দলটির নেতারা মনে করে সরকার নানা অজুহাতে নির্বাচন পেছাতে চাইছে৷ কিছু রাজনৈতিক দলও নানা স্বার্থে সরকারের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘কোন দল কী চায় তার চেয়ে বড় কথা হলো দেশের মানুষ নির্বাচন চায়৷ তারা ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়৷ দেশে যাতে কেউ নির্বাচন না চায় সেইরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা দেখছি৷ কোনো কোনো গোষ্ঠী এটা নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে৷”

বিএনপির দাবি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে৷ যে যে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো নিয়ে এরইমধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে তারা৷

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘তা করতে সাত দিন লাগে৷ এর বাইরে চিন্তা করা ঠিক না৷ স্বৈরাচার পতনের পর মানুষের এখন চাওয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়া৷ আর সেটার জন্যই দ্রুত নির্বাচন দরকার৷”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এখন দ্রুত নির্বাচন চায়৷ যারা নির্বাচন যথা সময়ে চায় না বা কালক্ষেপণ করতে চায় তারা আসলে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে কথা বলছেন৷ দেশে নির্বাচন যত দেরি হবে জটিলতা তত বাড়বে৷ নানা অপশক্তি তৎপর হবে৷ সরকার তা সামলাতে পারবে না৷”

তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা স্পষ্ট করে বলেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে৷ সংস্কারের ব্যাপারে তার অভিমত রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে সেগুলো নিয়েই কাজ শুরু করা যেতে পারে৷ তাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়৷

‘‘আর যারা বিচার শেষ হওয়ার কথা বলছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নাই৷ এতে অনেক সময় লাগে৷ নির্বাচন কি ততদিন হবে না?,” প্রশ্ন করেন প্রিন্স৷

মৌলিক সংস্কার, বিচারের আগে নির্বাচন চায় না এনসিপি

তবে নির্বাচনে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের একাংশের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি৷ তাদের মতে মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন৷ সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হওয়ার ব্যাপারেও অবস্থান নিয়েছে তারা৷ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আগে নির্বাচন হবে না বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷ তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ করেনি দলটি৷

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্ষমতাকে একমুখি করে রাখা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ এটা ঠিক না করে তো নির্বাচন দিয়ে কোনো লাভ নাই৷”

এনসিপির প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বার্থকে সামনে রেখে সব দলকে ঐক্যমতে আসতে হবে৷ আর এই দায়িত্ব সরকারের৷ সরকারকেই এটা সব দলকে বুঝাতে হবে যে মৌলিক সংস্কার, বিচার আগে দরকার৷ নির্বাচনই অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র কাজ না৷ তাদের সংস্কার ও বিচারকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ বিএনপি চায় না বলে হবে না৷ সেটা তো হতে পারে না৷’’

এনসিপি মনে করে, সবার আগে সংস্কারের রোডম্যাপ দরকার৷ তারপর নির্বাচন৷

‘‘এই কারণে আমরা নির্বাচনের কোনো টাইম ফ্রেম বেধে  দিতে চাই না,’’ বলেন মনিরা শারমিন৷

ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী প্রস্তুত ইসি

নির্বাচন নিয়ে সরকারের দিক থেকে শনিবার ডয়চে ভেলে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি৷ তবে আলাপচারিতায় সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘প্রফেসর ইউনূস বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ তাই হবে৷ তিনি অনড় আছেন৷”

ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলে আসছে নির্বাচন কমিশনও৷ সেক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই এগুচ্ছে তারা৷ নির্বাচন কমিশন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্ততি নিচ্ছে কমিশন৷ কমিশন সেই টার্গেটে সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে৷ তবে নির্বাচনের তফসিল হবে রাজনৈতিক দল ও সরকারের মতামতের ওপর ভিত্তি করে৷’’