ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত

সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি আদানির: কারসাজি হাসিনার মুখ্য সচিব কায়কাউসের

 ঢাকা: শুল্ক ও কর অব্যাহতির মাধ্যমে ভারতের আদানি গ্রুপকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাশ কাটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে আদানিকে এই সুযোগ করে দেয়। অভিযোগ আছে-বড় ধরনের এই কর ফাঁকির ঘটনার নেপথ্যে মূল ভূমিকায় ছিলেন পতিত সরকারের প্রভাবশালী দোসর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস (চুক্তির সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব ছিলেন)। এ কাজে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং ক্রয় চুক্তিতে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা-তা জানতে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে দুদক। গত ১৬ এপ্রিল চিঠিটি পাঠিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক রেজাউল করিম। সেখানে তথ্য পাঠানোর জন্য পাঁচ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়নি পিডিবি। ফলে দুদকের অনুসন্ধান কাজের স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। জানতে চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত ও রেকর্ডপত্র চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছি। সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের পর তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দেব।’

জানা গেছে, এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দলের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ প্রবেশ ও সঞ্চালনের সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি আদানি। আমদানির যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের অংশ হিসাবে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিলের প্রমাণ পায়নি তদন্ত দল। এছাড়া তা আইনি পন্থায় নিষ্পত্তি না করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে কর ‘ফাঁকির’ বিপুল এ অর্থ পিডিবির কাছ থেকে আদায়ের সুপারিশ করে এনবিআরের তদন্ত কমিটি।

আরও জানা গেছে, এবার দুদকের অনুসন্ধান দল এনবিআরের কমিটির সেই তদন্ত প্রতিবেদন, বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য ও তা শুল্ককর আদায়যোগ্য কি না, প্রযোজ্য হলে শুল্ককর পরিশোধ করা হয়েছে কি না এবং শুল্ককর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিল কি না, দেওয়া হয়ে থাকলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদি এবং আদানি গ্রুপের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ৯ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

এছাড়া দুদকের অনুসন্ধান টিম আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে শুল্কসংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কি না; এমন আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই পর্যন্ত ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিপরীতে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ ডলারের শুল্ককর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ মার্চ ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। তখন থেকেই আমদানি করা এ বিদ্যুতের শুল্কসহ অন্যান্য কর পরিশোধ করা হয়নি। এনবিআরের দল তদন্তে দেখতে পেয়েছে, ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় আদানির কাছ থেকে পিডিবি বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এনবিআরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়নি।

পিডিবি সূত্র জানায়, চুক্তির আওতায় গেল বছরের জুলাই পর্যন্ত আদানির কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৪ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। যার মূল্য ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪২ ডলার। এর বিপরীতে ৩১ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও বিভিন্ন কর মিলে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ ডলারের শুল্ককর পাওয়ার কথা এনবিআরের। চুক্তিতে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হলেও সেটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি এনবিআর থেকে। শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদন এটাই কর ফাঁকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, আমদানি করা বিদ্যুতের শুল্ককর মওকুফসংক্রান্ত কোনো চুক্তি ছিল কি না এবং থাকলে এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি হয়েছে কি না জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দাকে লিখিত জবাব দেয় পিডিবি। সেখানে বলা হয়, আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে আদানির বিদ্যুতের ওপর থেকে প্রযোজ্য যাবতীয় শুল্ক ও কর মওকুফের আবেদন করে। এক্ষেত্রে এর আগে ভারতীয় বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডকে দেওয়া অব্যাহতির কথা তুলে ধরা হয়। তবে এনবিআরের শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প সুবিধা শাখা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল চুক্তিতে থাকা শুল্ককর অব্যাহতির বিষয়ে চুক্তি সম্পাদনের আগে এনবিআরের কোনো মতামত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি জবাব দেননি।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর পতিত সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩ অক্টোবর ভারতের আদানি পাওয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহসংক্রান্ত ১১টি চুক্তি খতিয়ে দেখার কথা জানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের চুক্তি পর্যালোচনায় গঠন করা এ রিভিউ কমিটি। এর মধ্যে আদানি পাওয়ারের নির্মিত প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গোড্ডা পাওয়ার প্লান্টও রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি আদানির: কারসাজি হাসিনার মুখ্য সচিব কায়কাউসের

Update Time : ০১:০৯:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

 ঢাকা: শুল্ক ও কর অব্যাহতির মাধ্যমে ভারতের আদানি গ্রুপকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাশ কাটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে আদানিকে এই সুযোগ করে দেয়। অভিযোগ আছে-বড় ধরনের এই কর ফাঁকির ঘটনার নেপথ্যে মূল ভূমিকায় ছিলেন পতিত সরকারের প্রভাবশালী দোসর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস (চুক্তির সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব ছিলেন)। এ কাজে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং ক্রয় চুক্তিতে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা-তা জানতে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে দুদক। গত ১৬ এপ্রিল চিঠিটি পাঠিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক রেজাউল করিম। সেখানে তথ্য পাঠানোর জন্য পাঁচ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়নি পিডিবি। ফলে দুদকের অনুসন্ধান কাজের স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। জানতে চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত ও রেকর্ডপত্র চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছি। সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের পর তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দেব।’

জানা গেছে, এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দলের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ প্রবেশ ও সঞ্চালনের সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি আদানি। আমদানির যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের অংশ হিসাবে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিলের প্রমাণ পায়নি তদন্ত দল। এছাড়া তা আইনি পন্থায় নিষ্পত্তি না করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে কর ‘ফাঁকির’ বিপুল এ অর্থ পিডিবির কাছ থেকে আদায়ের সুপারিশ করে এনবিআরের তদন্ত কমিটি।

আরও জানা গেছে, এবার দুদকের অনুসন্ধান দল এনবিআরের কমিটির সেই তদন্ত প্রতিবেদন, বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য ও তা শুল্ককর আদায়যোগ্য কি না, প্রযোজ্য হলে শুল্ককর পরিশোধ করা হয়েছে কি না এবং শুল্ককর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিল কি না, দেওয়া হয়ে থাকলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদি এবং আদানি গ্রুপের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ৯ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

এছাড়া দুদকের অনুসন্ধান টিম আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে শুল্কসংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কি না; এমন আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই পর্যন্ত ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিপরীতে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ ডলারের শুল্ককর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ মার্চ ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। তখন থেকেই আমদানি করা এ বিদ্যুতের শুল্কসহ অন্যান্য কর পরিশোধ করা হয়নি। এনবিআরের দল তদন্তে দেখতে পেয়েছে, ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় আদানির কাছ থেকে পিডিবি বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এনবিআরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়নি।

পিডিবি সূত্র জানায়, চুক্তির আওতায় গেল বছরের জুলাই পর্যন্ত আদানির কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৪ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। যার মূল্য ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪২ ডলার। এর বিপরীতে ৩১ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও বিভিন্ন কর মিলে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ ডলারের শুল্ককর পাওয়ার কথা এনবিআরের। চুক্তিতে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হলেও সেটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি এনবিআর থেকে। শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদন এটাই কর ফাঁকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, আমদানি করা বিদ্যুতের শুল্ককর মওকুফসংক্রান্ত কোনো চুক্তি ছিল কি না এবং থাকলে এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি হয়েছে কি না জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দাকে লিখিত জবাব দেয় পিডিবি। সেখানে বলা হয়, আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে আদানির বিদ্যুতের ওপর থেকে প্রযোজ্য যাবতীয় শুল্ক ও কর মওকুফের আবেদন করে। এক্ষেত্রে এর আগে ভারতীয় বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডকে দেওয়া অব্যাহতির কথা তুলে ধরা হয়। তবে এনবিআরের শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প সুবিধা শাখা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল চুক্তিতে থাকা শুল্ককর অব্যাহতির বিষয়ে চুক্তি সম্পাদনের আগে এনবিআরের কোনো মতামত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি জবাব দেননি।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর পতিত সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩ অক্টোবর ভারতের আদানি পাওয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহসংক্রান্ত ১১টি চুক্তি খতিয়ে দেখার কথা জানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের চুক্তি পর্যালোচনায় গঠন করা এ রিভিউ কমিটি। এর মধ্যে আদানি পাওয়ারের নির্মিত প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গোড্ডা পাওয়ার প্লান্টও রয়েছে।