ঢাকা ০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

মানবিক করিডোর নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে?

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:১৯:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ২১ Time View

জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাখাইনে শর্তসাপেক্ষে ‘মানবিক করিডোর’ দিতে সম্মত হয়েছে – বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন৷ বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, করিডোর বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে৷

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির সম্মতির ভিত্তিতে না হলে মানবিক করিডোর বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে৷

রবিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাখাইনে মানবিক করিডোর সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত৷ কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে৷ কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলী রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না৷ সেই শর্তাবলী যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করবো৷”

কিন্ত শর্তগুলো যেমন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা খুলে বলেননি, তেমনি পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে  সেখানকার দায়িত্বশীল কেউও আনুষ্ঠানিকভাবে  কিছু জানাতে পারেন নি৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রাহমান  বলেন,” পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মানবিক করিডোরের ব্যাপারে যা বলেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে এখনো আমাদের পজিশন পেপার তৈরি হয়নি৷ সেটা হলে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো৷”

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, মোট তিনটি শর্তে জাতিসংঘের প্রস্তাবে রাখাইনে মানবিক করিডোর দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ৷ প্রথমত, রাখাইনের যেখানে খাদ্য ও ওষুধসহ মানবিক সহায়তা দেয়া হবে, সেই জায়গায় যেন সহায়ক পরিবেশ থাকে৷ সেখানে যুদ্ধাবস্থা বা সংঘাতময় পরিবেশ থাকলে চলবে না৷ যুদ্ধবিরতি হতে পারে বা বিবাদমান পক্ষগুলো একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে৷ সেটা মিয়ানমার জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে হতে পারে৷ অথবা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপাস্থিতির মাধ্যমেও নিশ্চিত হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, মানবিক সহায়তা দেয়ায় কোনো বৈষম্য করা যাবে না৷ রাখাইনে রোহিঙ্গা আছে, আরকানিজ আছে- যাদের প্রয়োজন, সবাইকে দিতে হবে৷ তৃতীয়ত, মানবিক সহায়তা হতে হবে শর্তহীন৷ সহায়তা পেতে কাউকে কোনো শর্তের অধীন করা যাবে না৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতিসংঘের কাছে এই শর্তগুলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে৷ বাংলাদেশ চাইছে, রাখাইনে যুদ্ধ বন্ধে যেন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ তাহলে সেখানে মানবিক সহায়তার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে৷

করিডোরটা কোন সীমান্ত দিয়ে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তবে ঘুমধুম সীমন্ত দিয়ে এটা সহজ হতে পারে৷

আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘর্ষে রাখাইনের ৮০ ভাগই এখন আরাকান আর্মির দখলে৷ রাখাইনে এখন কোনো ধরনের খাদ্য বা  ওষুধ ঢুকতে দিচ্ছে না মিয়ানমার৷ ফলে রাখাইনে এখন ব্যাপক খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষাবস্থা চলছে৷ যদি এই সংকট আরো বাড়ে, তাহলে আরাকানিদের সদলবলে বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা আছে৷

গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে নতুন করে এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷ তাদের নিয়ে এখন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ লাখ ১৩ হাজার৷

গত ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস৷ তখন তিনি মানবিক করিডোরের প্রস্তাব দেন৷ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে৷ আর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী রাখাইন দখলে থাকা আরাকান আর্মিকে জব্দ করতে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ৷ এ কারণে বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে চায় জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে মানবিক সহায়তা না পাঠানো হলে সেখানে থাকা বাকি জনগোষ্ঠীর খাদ্য অনুসন্ধানে প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে৷ আর এবার শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, রাখাইনের বাকি জনগোষ্ঠীরও প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে৷

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, করিডোরটিকে মানবিক ক্ষেত্রে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করা হলেও এটি বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ৷ যেখানে আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে সব সরবরাহ আটকে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার, সেখানে বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলো দখলে নেবে- তার নিশ্চয়তা বাংলাদেশ পাবে?

রোহিঙ্গা এবং অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির বলেন, ” আরাকান আর্মি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী৷ তাদের বিরুদ্ধে আছে মিয়ানমার সামরিক জান্তা৷ এখন প্রশ্ন হলো, সমঝোতা কীভাবে হবে? করিডোরের অনুমতি কারা দেবে, সামরিক জান্তা, না আরাকান আর্মি? ফলে একটি ঝুঁকি রয়েছে৷”

“এখন দেখার বিষয় জাতিসংঘ এটাকে কীভাবে ডিল করে, তারা কোন কোন পক্ষের সাথে কথা বলে৷ কিন্তু সেই সমঝোতায় বাংলাদেশকে অবশ্যই রাখতে হবে৷ এখানে নিরাপত্তার একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে৷ রাখাইনের প্রায় সব এলাকাই এখন আরাকান আর্মির দখলে৷ তারা তো আবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে৷ অন্যদিকে মিয়ানমার জান্তা, তারাও আক্রমণ করছে৷ সব মিলিয়ে তো একটা নিরাপদ এলাকা লাগবে মানবিক করিডোর ও মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য৷ সেটা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হলেও সহায়তা তো আগে বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে, তারপর রাখাইনে যাবে৷”

অন্যদিকে রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ” একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, রাষ্ট্র যেখানে যুদ্ধের কোনো বিরতি নাই, সেখানে হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর করতে গেলে পাঁচটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ অংশীজনদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে৷ মালিকানা থাকতে হবে৷ তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ স্বচ্ছতা থাকতে হবে৷ আর মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন একটা ব্যবস্থাপনা লাগবে৷”

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক বলেন, “এখন কিন্তু রাখাইনে জাতিসংঘের কোনো ব্যবস্থাপনা বা তাদের উপস্থিতি নাই৷ তাদের কোনো লজিজিস্টিক সাপোর্ট নাই৷ সেখানে অনেক স্টাফ লাগবে, নিরাপত্তা লাগবে৷ এখন জাতিসংঘকে সেই কাজ শুরু করতে তো দুই পক্ষের সম্মতি লাগবে৷”

“শুধু আরাকান আর্মির সঙ্গে সমঝোতা করে এটা করা যায়৷ সেটা করলে মিয়ানমার সামরিক জান্তা যদি তখন আকাশপথে হামলা চালায়? তাদের এয়ারফোর্স খুবই শক্তিশালী৷ তখন তো বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি হবে,”  বলেন তিনি৷

তার কথা, ” মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির একমত হতে হবে৷ তা না হলে মানবিক করিডোর অবশ্যই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির হবে৷ প্রথমে তো আমি চ্যানেলের কথা শুনেছিলাম৷ বাংলাদেশ সরকারও কিন্তু আগে করিডোরের জন্য রাজি হয়নি৷ এখন তো করিডোরের কথা শুনছি৷”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও

মানবিক করিডোর নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে?

Update Time : ০৭:১৯:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাখাইনে শর্তসাপেক্ষে ‘মানবিক করিডোর’ দিতে সম্মত হয়েছে – বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন৷ বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, করিডোর বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে৷

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির সম্মতির ভিত্তিতে না হলে মানবিক করিডোর বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে৷

রবিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাখাইনে মানবিক করিডোর সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত৷ কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে৷ কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলী রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না৷ সেই শর্তাবলী যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করবো৷”

কিন্ত শর্তগুলো যেমন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা খুলে বলেননি, তেমনি পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে  সেখানকার দায়িত্বশীল কেউও আনুষ্ঠানিকভাবে  কিছু জানাতে পারেন নি৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রাহমান  বলেন,” পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মানবিক করিডোরের ব্যাপারে যা বলেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে এখনো আমাদের পজিশন পেপার তৈরি হয়নি৷ সেটা হলে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো৷”

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, মোট তিনটি শর্তে জাতিসংঘের প্রস্তাবে রাখাইনে মানবিক করিডোর দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ৷ প্রথমত, রাখাইনের যেখানে খাদ্য ও ওষুধসহ মানবিক সহায়তা দেয়া হবে, সেই জায়গায় যেন সহায়ক পরিবেশ থাকে৷ সেখানে যুদ্ধাবস্থা বা সংঘাতময় পরিবেশ থাকলে চলবে না৷ যুদ্ধবিরতি হতে পারে বা বিবাদমান পক্ষগুলো একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে৷ সেটা মিয়ানমার জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে হতে পারে৷ অথবা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপাস্থিতির মাধ্যমেও নিশ্চিত হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, মানবিক সহায়তা দেয়ায় কোনো বৈষম্য করা যাবে না৷ রাখাইনে রোহিঙ্গা আছে, আরকানিজ আছে- যাদের প্রয়োজন, সবাইকে দিতে হবে৷ তৃতীয়ত, মানবিক সহায়তা হতে হবে শর্তহীন৷ সহায়তা পেতে কাউকে কোনো শর্তের অধীন করা যাবে না৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতিসংঘের কাছে এই শর্তগুলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে৷ বাংলাদেশ চাইছে, রাখাইনে যুদ্ধ বন্ধে যেন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ তাহলে সেখানে মানবিক সহায়তার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে৷

করিডোরটা কোন সীমান্ত দিয়ে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তবে ঘুমধুম সীমন্ত দিয়ে এটা সহজ হতে পারে৷

আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘর্ষে রাখাইনের ৮০ ভাগই এখন আরাকান আর্মির দখলে৷ রাখাইনে এখন কোনো ধরনের খাদ্য বা  ওষুধ ঢুকতে দিচ্ছে না মিয়ানমার৷ ফলে রাখাইনে এখন ব্যাপক খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষাবস্থা চলছে৷ যদি এই সংকট আরো বাড়ে, তাহলে আরাকানিদের সদলবলে বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা আছে৷

গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে নতুন করে এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷ তাদের নিয়ে এখন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ লাখ ১৩ হাজার৷

গত ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস৷ তখন তিনি মানবিক করিডোরের প্রস্তাব দেন৷ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে৷ আর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী রাখাইন দখলে থাকা আরাকান আর্মিকে জব্দ করতে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ৷ এ কারণে বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে চায় জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে মানবিক সহায়তা না পাঠানো হলে সেখানে থাকা বাকি জনগোষ্ঠীর খাদ্য অনুসন্ধানে প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে৷ আর এবার শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, রাখাইনের বাকি জনগোষ্ঠীরও প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে৷

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, করিডোরটিকে মানবিক ক্ষেত্রে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করা হলেও এটি বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ৷ যেখানে আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে সব সরবরাহ আটকে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার, সেখানে বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলো দখলে নেবে- তার নিশ্চয়তা বাংলাদেশ পাবে?

রোহিঙ্গা এবং অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির বলেন, ” আরাকান আর্মি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী৷ তাদের বিরুদ্ধে আছে মিয়ানমার সামরিক জান্তা৷ এখন প্রশ্ন হলো, সমঝোতা কীভাবে হবে? করিডোরের অনুমতি কারা দেবে, সামরিক জান্তা, না আরাকান আর্মি? ফলে একটি ঝুঁকি রয়েছে৷”

“এখন দেখার বিষয় জাতিসংঘ এটাকে কীভাবে ডিল করে, তারা কোন কোন পক্ষের সাথে কথা বলে৷ কিন্তু সেই সমঝোতায় বাংলাদেশকে অবশ্যই রাখতে হবে৷ এখানে নিরাপত্তার একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে৷ রাখাইনের প্রায় সব এলাকাই এখন আরাকান আর্মির দখলে৷ তারা তো আবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে৷ অন্যদিকে মিয়ানমার জান্তা, তারাও আক্রমণ করছে৷ সব মিলিয়ে তো একটা নিরাপদ এলাকা লাগবে মানবিক করিডোর ও মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য৷ সেটা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হলেও সহায়তা তো আগে বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে, তারপর রাখাইনে যাবে৷”

অন্যদিকে রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ” একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, রাষ্ট্র যেখানে যুদ্ধের কোনো বিরতি নাই, সেখানে হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর করতে গেলে পাঁচটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ অংশীজনদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে৷ মালিকানা থাকতে হবে৷ তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ স্বচ্ছতা থাকতে হবে৷ আর মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন একটা ব্যবস্থাপনা লাগবে৷”

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক বলেন, “এখন কিন্তু রাখাইনে জাতিসংঘের কোনো ব্যবস্থাপনা বা তাদের উপস্থিতি নাই৷ তাদের কোনো লজিজিস্টিক সাপোর্ট নাই৷ সেখানে অনেক স্টাফ লাগবে, নিরাপত্তা লাগবে৷ এখন জাতিসংঘকে সেই কাজ শুরু করতে তো দুই পক্ষের সম্মতি লাগবে৷”

“শুধু আরাকান আর্মির সঙ্গে সমঝোতা করে এটা করা যায়৷ সেটা করলে মিয়ানমার সামরিক জান্তা যদি তখন আকাশপথে হামলা চালায়? তাদের এয়ারফোর্স খুবই শক্তিশালী৷ তখন তো বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি হবে,”  বলেন তিনি৷

তার কথা, ” মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির একমত হতে হবে৷ তা না হলে মানবিক করিডোর অবশ্যই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির হবে৷ প্রথমে তো আমি চ্যানেলের কথা শুনেছিলাম৷ বাংলাদেশ সরকারও কিন্তু আগে করিডোরের জন্য রাজি হয়নি৷ এখন তো করিডোরের কথা শুনছি৷”