
পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মায় জেগে ওঠা ডিগ্রীর চর দখলকে কেন্দ্র করে দু পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনী- র্যাব- পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে।
ঈশ্বরদীতে পদ্মার চড়ে জেগে ওঠা ওই জমির দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আবারও শক্তি প্রদর্শন করেছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কয়েক দফা ফাঁকা গুলি ছুড়ে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকুড়ুলিয়া গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। শনিবার সকালেও ওই গ্রামে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার দুপুরের পর সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা অভিযানে চারজনকে আটক করা হয়।
তবে পুলিশ আটক ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- চরকড়ুলিয়া গ্রামের রেকাত আলীর ছেলে পিল্লু (২৬), ছুবাইল (২৪), আসিফ (২০) আলম (২৭) বাদশা (২১)। এছাড়া আহত হয়েছেন ১০ জন। আহতরা সকলেই পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, চরকুড়ুলিয়া গ্রামজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ভীত-সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে করে চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে টহল দিচ্ছেন। বেশ কিছু বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। অভিযানের সময় সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।
স্থানীয় সূত্র বলছে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫টি মোটরসাইকেলযোগে একদল লোক ডিগ্রির চরে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল কুষ্টিয়ার মুকুল-তরিকুল বাহিনীর অন্তত ৫০ জনের একটি দল। দুই পক্ষ কাছাকাছি এলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
চরের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডিগ্রির চর ঈশ্বরদী উপজেলার সীমানার মধ্যে হলেও এর অনেক অংশ কুষ্টিয়ার সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় কুষ্টিয়ার মুকুল বাহিনী জমিগুলো দখলে রাখতে চায়। অন্যদিকে ইয়াছিন বাহিনীও চরের দখলে মরিয়া।’
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন, ‘অনেক বছর পর এমন আতঙ্ক দেখলাম। শিশুরা কাঁদছে, মানুষ রাতের বেলা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে।’
গ্রামের গৃহবধূ ময়না খাতুন জানান, ‘বাচ্চাগুলারে কোলে নিয়ে দুপুর থেকে ঘরের ভেতর লুকাইয়া ছিলাম। জানি না কখন গুলি লাগবে। এখনো ভয়ে কাঁপতেছি।’
চরকুড়ুলিয়ার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানায়, ‘শুক্রবার হঠাৎ গুলির শব্দে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন তো জীবন বাঁচানই মুশকিল।’
স্থানীয় দোকানি আজিজুল হক বলেন, ‘দোকানপাট বন্ধ। কেউ বাজারে আসে না। দুইদিনে এক টাকাও বিক্রি হয়নি। এমন চলতে থাকলে আমরা না খেয়ে মরবো।’
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, ‘আধিপত্য ও চর দখল নিয়ে গোলাগুলির খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে।’
ঈশ্বরদি প্রতিবেদক 


















