ঢাকা ০৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা Logo দুর্গাপুরে ‎রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo শীতের গন্ধ, তাপমাত্রা কমছে প্রতিদিন দুই ডিগ্রি ঈশ্বরদীতে দোকানে উঠছে শীতের সোয়েটার-জ্যাকেট, কম্বল Logo পদ্মার চরজুড়ে চলছে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ Logo নীলফামারীতে চার দফা দাবী বাস্তবায়নে বিসিএস প্রভাষক পরিষদের মানবন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

কম শ্রমে, বেশি ফসল, কম পুঁজি, বেশি লাভ, ঈশ্বরদীতে ভুট্টা চাষে ঝুকছেন কৃষক

ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর চরে ফাতেমা খাতুনের লাকি সেভেন জাতের ভুট্টার প্রদর্শনী প্লট।

অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় ঈশ্বরদীর চরাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ দিন দিন বাড়ছে। বোরো ধান ও গমসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়াই বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উচ্চ ফলনশীল জাত, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুট্টা চাষে ঘুরেছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। বিঘা প্রতি ২০-২৩ হাজার টাকা খরচে ভুট্টা পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। যা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৪২-৪৫ হাজার টাকা। দেশীয় জাতের ভুট্টায় তেমন ভালো ফলন না হওয়ায় হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অর্জিত হয়েছে ৩ ০০ হেক্টর জমি। এর থেকেও উৎপাদন হবে তিন হাজার ৩ ০০ শত মেট্রিক টন।
উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল গাফফার জানান, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গত বছর ভুট্টা চাষ করেছিলাম। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর ভুট্টার চাষ বাড়িয়েছি। যদি ভুট্টার দাম ঠিক থাকে তাহলে এ বছরেও বেশ লাভ হবে। ওই এলাকার আরো কৃষক মুনছুর আলী,ফিরোজ, জিয়া,আরোজ ও মোহাম্মদ আলী ভুট্টার আবাদ করেছেন।
উপজেলা আরামবাড়িয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান,ভুট্টা চাষে রোগবালাই কম। খরচ কম হয়। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গমের সঙ্গে ভুট্টা মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খাওয়া যায়। গোখাদ্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যবহৃত হয়। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। রোগবালাই হয়নি বললেই চলে। ভুট্টা মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। বাজারে ভুট্টার দামও ভালো। তারপরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমরা যেমনটি আশা করছি সেই রকম হলে গাফফার সহ ভুট্টা চাষীরা অবশ্যই লাভবান হবেন।
উপজেলার মাঝদিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের বাস্তবায়নে পদ্মা নদীর চরে ফাতেমা খাতুন এক বিঘা জমিতে লাকি -৭ জাতের ভুট্টার আবাদ করেছেন। তিনি জানান, সমতল জমির চাইতে চরাঞ্চলে কম শ্রমে, বেশি ফসল, কম পুঁজি, বেশি লাভ, সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় প্রতিবছর পদ্মার চরে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সমতলে প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ২৫ থেকে ৩০ মন। চরাঞ্চলে উৎপন্ন হয় ৩৫ থেকে ৪৫ মন। প্রতি বিঘায় ভুট্টা উৎপাদনে খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি করে কৃষক পান ৩৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু জানান, আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভুট্টা। এর আগে এ শিল্প ছিল আমদানিনির্ভর। দেশের জমিগুলি ভুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষক নিরাপদ লাভ ও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষ।
তিনি আরো বলেন ধান ও গমের তুলনায়
ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ পার্সেন্ট আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন “এ” থাকে।

ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভুট্টার চাষ আবাদের জমি দ্রুত বাড়ছে। রবি মৌসুমে বিঘা প্রতি ৪০-৪২ মণ ভূট্টার ফলন হয়। ঈশ্বরদীতে “লাকি-৭” ভূট্টার জাতের জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভ করতে পারে, সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভুট্টা চাষে চরের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ও কৃষকরা এর সঠিক দাম পেলে চরের অর্থনীতি আরও সচল হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা

কম শ্রমে, বেশি ফসল, কম পুঁজি, বেশি লাভ, ঈশ্বরদীতে ভুট্টা চাষে ঝুকছেন কৃষক

Update Time : ০৯:৫৩:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় ঈশ্বরদীর চরাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ দিন দিন বাড়ছে। বোরো ধান ও গমসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়াই বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উচ্চ ফলনশীল জাত, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুট্টা চাষে ঘুরেছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। বিঘা প্রতি ২০-২৩ হাজার টাকা খরচে ভুট্টা পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। যা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৪২-৪৫ হাজার টাকা। দেশীয় জাতের ভুট্টায় তেমন ভালো ফলন না হওয়ায় হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অর্জিত হয়েছে ৩ ০০ হেক্টর জমি। এর থেকেও উৎপাদন হবে তিন হাজার ৩ ০০ শত মেট্রিক টন।
উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল গাফফার জানান, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গত বছর ভুট্টা চাষ করেছিলাম। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর ভুট্টার চাষ বাড়িয়েছি। যদি ভুট্টার দাম ঠিক থাকে তাহলে এ বছরেও বেশ লাভ হবে। ওই এলাকার আরো কৃষক মুনছুর আলী,ফিরোজ, জিয়া,আরোজ ও মোহাম্মদ আলী ভুট্টার আবাদ করেছেন।
উপজেলা আরামবাড়িয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান,ভুট্টা চাষে রোগবালাই কম। খরচ কম হয়। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গমের সঙ্গে ভুট্টা মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খাওয়া যায়। গোখাদ্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যবহৃত হয়। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। রোগবালাই হয়নি বললেই চলে। ভুট্টা মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। বাজারে ভুট্টার দামও ভালো। তারপরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমরা যেমনটি আশা করছি সেই রকম হলে গাফফার সহ ভুট্টা চাষীরা অবশ্যই লাভবান হবেন।
উপজেলার মাঝদিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের বাস্তবায়নে পদ্মা নদীর চরে ফাতেমা খাতুন এক বিঘা জমিতে লাকি -৭ জাতের ভুট্টার আবাদ করেছেন। তিনি জানান, সমতল জমির চাইতে চরাঞ্চলে কম শ্রমে, বেশি ফসল, কম পুঁজি, বেশি লাভ, সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় প্রতিবছর পদ্মার চরে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সমতলে প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ২৫ থেকে ৩০ মন। চরাঞ্চলে উৎপন্ন হয় ৩৫ থেকে ৪৫ মন। প্রতি বিঘায় ভুট্টা উৎপাদনে খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি করে কৃষক পান ৩৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু জানান, আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভুট্টা। এর আগে এ শিল্প ছিল আমদানিনির্ভর। দেশের জমিগুলি ভুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষক নিরাপদ লাভ ও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষ।
তিনি আরো বলেন ধান ও গমের তুলনায়
ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ পার্সেন্ট আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন “এ” থাকে।

ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভুট্টার চাষ আবাদের জমি দ্রুত বাড়ছে। রবি মৌসুমে বিঘা প্রতি ৪০-৪২ মণ ভূট্টার ফলন হয়। ঈশ্বরদীতে “লাকি-৭” ভূট্টার জাতের জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভ করতে পারে, সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভুট্টা চাষে চরের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ও কৃষকরা এর সঠিক দাম পেলে চরের অর্থনীতি আরও সচল হবে।