ঢাকা ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত

ইসরায়েলি বর্বরতায় নিশ্চিহ্নের পথে রাফা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বরতা আরো বেড়েছে। গাজার বিভিন্ন অংশে হামলার মাত্রা বড় আকারে বাড়িয়েছে ইসরায়েল, যার বড় একটি অংশ দক্ষিণ গাজার রাফা শহরকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। কার্যত নিশ্চিহ্নের পথে রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি।

গাজার অবশিষ্টাংশ থেকে রাফাকে বিচ্ছিন্ন করতে পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে রাফা ও খান ইউনিসের বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাহিনী। এরই মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি নতুন সামরিক করিডোর স্থাপনের কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। তারা এর নাম দিয়েছে ‘মোরাগ করিডোর’।

তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ শহরের ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর, ২৪টি পানির কূপের মধ্যে ২২টি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ৮৫ শতাংশেরও বেশি এবং আটটি স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এছাড়া সেখানকার ১২টি চিকিৎসা কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে গেছে।

অবরুদ্ধ এই উপত্যকাজুড়ে দখলদার বাহিনীর বর্বর হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং এর মধ্যেই একদিনে আরও অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। এতে করে ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছে গেছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

রাফা এখন বসবাসের অযোগ্য শহর
দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় মানবিক বিপর্যয় এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলা সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনের ওপর সব দিক থেকেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।

এক বিবৃতিতে অফিসটি জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘নিরাপত্তাহীন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা এবং আবাসিক বাড়িগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।’

কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনারা যে কাউকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। তিনি ঐ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন।

খোদারি বলেন, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের জন্য একমাত্র খোলা পথ হলো উপকূলীয় রাস্তার আল-রাশিদ করিডোর। অর্থাৎ আরো বেশি ফিলিস্তিনিকে খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং ইসরায়েল আরো বেশি ভূমি দখলের চেষ্টা করছে।

এদিকে হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজার ভেতরে নতুন করে একটি ‘নিরাপত্তা করিডোর’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে তারা দক্ষিণের রাফা শহরকে বাকি গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ‘মোরাগ করিডর’ বা সামরিক করিডোর স্থাপন করে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানচিত্র অনুসারে, করিডোরটি গাজার পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ গত ২ এপ্রিল নতুন এই করিডরের ঘোষণা দেন।

তিনি জানান, এটি রাফা শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, মোরাগ ছিল একটি ইহুদি বসতি, যা রাফাহ ও খান ইউনিসের মাঝামাঝি অবস্থান করত। নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, করিডোরটি এই দুই শহরের মধ্য দিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করিডোর নির্মাণ গাজার ভূখণ্ড ভাগ করে ফেলার একটি পরিকল্পিত কৌশল, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। এদিকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাকস্বাধীনতার ওপর দমনপীড়নের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউজের সামনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। গাজার ভয়াবহ দৃশ্য ও নিহতের সংখ্যা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে এই ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সূত্র: আলজাজিরা ও বিবিসি

দৈনিক বার্তা / ০৭ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

ইসরায়েলি বর্বরতায় নিশ্চিহ্নের পথে রাফা

Update Time : ০৩:০৭:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বরতা আরো বেড়েছে। গাজার বিভিন্ন অংশে হামলার মাত্রা বড় আকারে বাড়িয়েছে ইসরায়েল, যার বড় একটি অংশ দক্ষিণ গাজার রাফা শহরকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। কার্যত নিশ্চিহ্নের পথে রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি।

গাজার অবশিষ্টাংশ থেকে রাফাকে বিচ্ছিন্ন করতে পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে রাফা ও খান ইউনিসের বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাহিনী। এরই মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি নতুন সামরিক করিডোর স্থাপনের কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। তারা এর নাম দিয়েছে ‘মোরাগ করিডোর’।

তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ শহরের ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর, ২৪টি পানির কূপের মধ্যে ২২টি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ৮৫ শতাংশেরও বেশি এবং আটটি স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এছাড়া সেখানকার ১২টি চিকিৎসা কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে গেছে।

অবরুদ্ধ এই উপত্যকাজুড়ে দখলদার বাহিনীর বর্বর হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং এর মধ্যেই একদিনে আরও অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। এতে করে ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছে গেছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

রাফা এখন বসবাসের অযোগ্য শহর
দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় মানবিক বিপর্যয় এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলা সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনের ওপর সব দিক থেকেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।

এক বিবৃতিতে অফিসটি জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘নিরাপত্তাহীন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা এবং আবাসিক বাড়িগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।’

কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনারা যে কাউকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। তিনি ঐ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন।

খোদারি বলেন, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের জন্য একমাত্র খোলা পথ হলো উপকূলীয় রাস্তার আল-রাশিদ করিডোর। অর্থাৎ আরো বেশি ফিলিস্তিনিকে খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং ইসরায়েল আরো বেশি ভূমি দখলের চেষ্টা করছে।

এদিকে হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজার ভেতরে নতুন করে একটি ‘নিরাপত্তা করিডোর’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে তারা দক্ষিণের রাফা শহরকে বাকি গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ‘মোরাগ করিডর’ বা সামরিক করিডোর স্থাপন করে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানচিত্র অনুসারে, করিডোরটি গাজার পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ গত ২ এপ্রিল নতুন এই করিডরের ঘোষণা দেন।

তিনি জানান, এটি রাফা শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, মোরাগ ছিল একটি ইহুদি বসতি, যা রাফাহ ও খান ইউনিসের মাঝামাঝি অবস্থান করত। নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, করিডোরটি এই দুই শহরের মধ্য দিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করিডোর নির্মাণ গাজার ভূখণ্ড ভাগ করে ফেলার একটি পরিকল্পিত কৌশল, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। এদিকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাকস্বাধীনতার ওপর দমনপীড়নের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউজের সামনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। গাজার ভয়াবহ দৃশ্য ও নিহতের সংখ্যা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে এই ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সূত্র: আলজাজিরা ও বিবিসি

দৈনিক বার্তা / ০৭ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি