ঢাকা ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সাঁথিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন Logo নানা আয়োজনে নীলফামারীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন Logo আত্রাইয়ে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo রোবটের সাথে নাচলেন ইলন মাস্ক Logo চারঘাটে মোটরসাইকেল -এ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর Logo জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে  ঈশ্বরদীতে আলোচনা সভা ও কর্মী সমাবেশ Logo জাতির প্রকৃত শক্তি কেবল তার প্রাকৃতিক সম্পদে নয়: প্রধান উপদেষ্টা Logo তিস্তা নদী রক্ষায় তরুণ-তরুণীদের ফ্ল্যাশমব Logo ইসি শতভাগ প্রস্তুত: ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব Logo চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে  ১২ কোটি টাকার স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সম্মেলন

লোকজ কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

বৃহত্তর ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি তুলেছেন তার ভক্ত অনুরাগী, স্থানীয় সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) কবির ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় বক্তারা কবি আবদুল হাই মাশরেকীর সাহিত্যকীর্তির মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় কবি ও সাংবাদিক ফয়সল আহমেদ-এর সঞ্চালনায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি কবি আলম মাহবুব। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসহাক।

আলোচনায় আরও অংশ নেন, আবদুল হাই মাশরেকীর সন্তান ও দৈনিক ডেসটিনির মফস্বল সম্পাদক নঈম মাশরেকী, কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী আজিজুল হাই সোহাগ, কলতান সংগীত একাডেমির পরিচালক দিপু মুহাম্মদ, কবি শহিদুল ইসলাম সেলিম, উপজেলা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মিসবাউল হক মালেক ও সদস্য এইচএম হাবিব।

মেঘের আকাশ, উন্মুক্ত প্রান্তর, আর মানুষের হৃদয়ের গভীর অনুভূতি—এসবের মিশেলে গড়ে ওঠা এক অনন্য সুরের নাম আবদুল হাই মাশরেকী। ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে…, ‘মাঝি বাইয়া যাও রে…’ ‘আমার কাঙ্খের কলসি…’—এরকম কালজয়ী সুরের স্রষ্টার জন্মবার্ষিকীতে কণ্ঠে কণ্ঠে উঠলো তারই সৃষ্টি।

এসময় বক্তারা বলেন, কবি মাশরেকীর সাহিত্য অবদান শুধু গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি ছিলেন বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর, বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অথচ এই কালজয়ী স্রষ্টার যথাযথ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও অধরা।

সভায় বক্তারা একযোগে কবির প্রতি মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননার দাবি জানান। তারা বলেন, এমন একজন লেখক যিনি শোষিত মানুষের ব্যথা-বেদনা গান ও কবিতায় ধারণ করেছেন, তাকে অবহেলিত রাখা আমাদের জাতিগত ব্যর্থতা।

সমাপ্তি লগ্নে আবদুল হাই মাশরেকীর স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তার রচিত কিছু জনপ্রিয় গানের সুরে আলোচিত এই সন্ধ্যায় উপস্থিত সবার হৃদয়ে যেন ভেসে এলো এক চিরায়ত বাংলার সুর।

আবদুল হাই মাশরেকী ১৯০৯ সালের ১ এপ্রিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কাঁকনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই গান ও কবিতা রচনা করতেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতাকে প্রতিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। ১৯৮৮ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।

প্রসঙ্গত, লোককবি আবদুল হাই মাশরেকীর ‘আল্লাহ্ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই আল্লাহ…’ অমর গান আজও বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে আধুনিক কাব্য ‘কিছু রেখে যেতে চাই’, ‘হে আমার দেশ’, ‘দেশ দেশ নন্দিতা,’ ‘মাঠের কবিতা মাঠের গান’, ‘কাল নিরবধি’, গীতিনাট্য ও কাব্য ‘ভাটিয়ালী’, পুঁথিকাব্য ‘হযরত আবু বকর (রা.)’, খণ্ডকাব্য ‘অভিশপ্তের বাণী’, পালাগান ‘রাখালবন্ধু’, ‘জরিনা সুন্দরী’, পল্লিগীতিকা ‘ডাল ধরিয়া নুয়াইয়া কন্যা’, জারি ‘দুখু মিয়ার জারি’, ছোটদের কাব্য ‘হুতুম ভুতুম রাত্রি’, গল্প ‘কুলসুম’, ‘বাউল মনের নকশা’, ‘মানুষ ও লাশ’, ‘নদী ভাঙে’, নাটক ‘সাঁকো’, ‘নতুন গাঁয়ের কাহিনী’, অনুবাদ ‘আকাশ কেন নীল’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

দৈনিক বার্তা / ০৫ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সাঁথিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন

লোকজ কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

Update Time : ০৪:১৩:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫

বৃহত্তর ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি তুলেছেন তার ভক্ত অনুরাগী, স্থানীয় সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) কবির ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় বক্তারা কবি আবদুল হাই মাশরেকীর সাহিত্যকীর্তির মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় কবি ও সাংবাদিক ফয়সল আহমেদ-এর সঞ্চালনায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি কবি আলম মাহবুব। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসহাক।

আলোচনায় আরও অংশ নেন, আবদুল হাই মাশরেকীর সন্তান ও দৈনিক ডেসটিনির মফস্বল সম্পাদক নঈম মাশরেকী, কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী আজিজুল হাই সোহাগ, কলতান সংগীত একাডেমির পরিচালক দিপু মুহাম্মদ, কবি শহিদুল ইসলাম সেলিম, উপজেলা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মিসবাউল হক মালেক ও সদস্য এইচএম হাবিব।

মেঘের আকাশ, উন্মুক্ত প্রান্তর, আর মানুষের হৃদয়ের গভীর অনুভূতি—এসবের মিশেলে গড়ে ওঠা এক অনন্য সুরের নাম আবদুল হাই মাশরেকী। ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে…, ‘মাঝি বাইয়া যাও রে…’ ‘আমার কাঙ্খের কলসি…’—এরকম কালজয়ী সুরের স্রষ্টার জন্মবার্ষিকীতে কণ্ঠে কণ্ঠে উঠলো তারই সৃষ্টি।

এসময় বক্তারা বলেন, কবি মাশরেকীর সাহিত্য অবদান শুধু গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি ছিলেন বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর, বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অথচ এই কালজয়ী স্রষ্টার যথাযথ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও অধরা।

সভায় বক্তারা একযোগে কবির প্রতি মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননার দাবি জানান। তারা বলেন, এমন একজন লেখক যিনি শোষিত মানুষের ব্যথা-বেদনা গান ও কবিতায় ধারণ করেছেন, তাকে অবহেলিত রাখা আমাদের জাতিগত ব্যর্থতা।

সমাপ্তি লগ্নে আবদুল হাই মাশরেকীর স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তার রচিত কিছু জনপ্রিয় গানের সুরে আলোচিত এই সন্ধ্যায় উপস্থিত সবার হৃদয়ে যেন ভেসে এলো এক চিরায়ত বাংলার সুর।

আবদুল হাই মাশরেকী ১৯০৯ সালের ১ এপ্রিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কাঁকনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই গান ও কবিতা রচনা করতেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতাকে প্রতিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। ১৯৮৮ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।

প্রসঙ্গত, লোককবি আবদুল হাই মাশরেকীর ‘আল্লাহ্ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই আল্লাহ…’ অমর গান আজও বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে আধুনিক কাব্য ‘কিছু রেখে যেতে চাই’, ‘হে আমার দেশ’, ‘দেশ দেশ নন্দিতা,’ ‘মাঠের কবিতা মাঠের গান’, ‘কাল নিরবধি’, গীতিনাট্য ও কাব্য ‘ভাটিয়ালী’, পুঁথিকাব্য ‘হযরত আবু বকর (রা.)’, খণ্ডকাব্য ‘অভিশপ্তের বাণী’, পালাগান ‘রাখালবন্ধু’, ‘জরিনা সুন্দরী’, পল্লিগীতিকা ‘ডাল ধরিয়া নুয়াইয়া কন্যা’, জারি ‘দুখু মিয়ার জারি’, ছোটদের কাব্য ‘হুতুম ভুতুম রাত্রি’, গল্প ‘কুলসুম’, ‘বাউল মনের নকশা’, ‘মানুষ ও লাশ’, ‘নদী ভাঙে’, নাটক ‘সাঁকো’, ‘নতুন গাঁয়ের কাহিনী’, অনুবাদ ‘আকাশ কেন নীল’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

দৈনিক বার্তা / ০৫ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি