ঢাকা ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিশ্ব নেতাদের

ট্রাম্প এক ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে শুল্ক আরোপের হিসাব তুলে ধরেন

যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যতে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে “বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত” বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন।

তার এমন মন্তব্য অন্য অনেক দেশের, যেমন চীনের সাথে মিলে গিয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে এবং চীন জানিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ” পাল্টা দৃঢ় পদক্ষেপ” নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাঁচই এপ্রিল থেকে সমস্ত আমদানি পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং ৯ই এপ্রিল থেকে প্রায় ৬০টি দেশের ওপর আরও বড় ধরণের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় এমন পাল্টা সতর্ক বার্তা আসে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলো অন্যায্য বাণিজ্য নীতির প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি দাবি করেছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট ‘দয়া’ দেখিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার এই মন্তব্যও করেছেন যে, এই পদক্ষেপ “আমেরিকাকে আবারও ধনী করে তুলবে”।

যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যতে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বিশ্ব নেতাদের নিন্দা

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতি দেওয়ার সময়, ভন ডার লেইন বলেন, আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপের কারণে “অনিশ্চয়তা বাড়বে”, যা “বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জন্য মারাত্মক” পরিণতি ডেকে আনবে।

সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোর উপর এর প্রভাব কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ভন ডার লেইন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এখন সেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন – যা ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে – তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি বলেন, “যদি আপনি আমাদের একজনের বিরুদ্ধে যান, তার মানে আপনি আমাদের সকলের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন”,।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, সিদ্ধান্তটি “ভুল” হয়েছে। তবে তিনি “বাণিজ্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে” যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্পেন “একটি উন্মুক্ত বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে”। আয়ারল্যান্ডে টাওইসেক মিচেল মার্টিন বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত “ভীষণ দুঃখজনক” এবং “কারো জন্যই লাভজনক নয়”।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার এলিসি প্রাসাদে নতুন শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে, চীন – যাদেরকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট “সবচেয়ে খারাপ অপরাধী” হিসেবে দেখে –তাদের পণ্যের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্কের উপরে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে মোট শুল্ক কমপক্ষে ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে “অবিলম্বে শুল্ক বাতিল” করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে চীন “নিজস্ব অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা দৃঢ়ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

তাইওয়ান, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, তারা এই পদক্ষেপকে “অত্যন্ত অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছে।

তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী চো জং তাই বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে “গুরুতর প্রতিবাদ” জানাবে।

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ “একটি বাস্তবতায়” পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু। তিনি বলেছেন, তার সরকার “বাণিজ্য সংকট কাটানোর” উপায় খুঁজে দেখবে, কারণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

জাপান বলেছে, তাদের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার বিষয়টি “অত্যন্ত দুঃখজনক” এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং মার্কিন-জাপান চুক্তিগুলো লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড বলেছে, তারা তাদের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করবে।

ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার আগেই যেখানে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর সব শুল্ক বাতিল করেছিলেন, এখন তাদের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় তারা “সম্পূর্ণভাবে হতবাক” হয়ে পড়েছেন।

“আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত এই পদক্ষেপকে প্রতিরোধ করবে,” স্থানীয় মিডিয়াকে জানিয়েছেন ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের শুল্ক আরোপ চীনের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ ছিল। কারণ চীন, মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। মার্কিন বাণিজ্যে “শুল্ক বহির্ভূত” বাধা আরোপ করেছে। সেইসাথে চীন এমনভাবে কাজ করেছে, যা আমেরিকান অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোকে দুর্বল করে।

যে দেশগুলো সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্কের আওতায় পড়েছে, সেইসব দেশের নেতারাও ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বাজারের ওপর শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, এই “অন্যায় শুল্ক আরোপের” জন্য আমেরিকানদের সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে।

তার সরকার কোন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, : “আমরা এমন একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেব না, যার কারণে জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর করে দেবে”।”

ডাউনিং স্ট্রিটের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের ওপর কম শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য চুক্তির জন্য দেশটির সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার “প্রতিফলন” ঘটিয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেছেন, সরকার ” যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী, যা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ন্যায্য এবং ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।”

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ, ব্রাজিল বুধবার কংগ্রেসে একটি আইন অনুমোদন করেছে – অর্থনৈতিক প্রতিদান আইন (Economic Reciprocity Law) – যা ট্রাম্পের আরোপ করা ১০ শতাংশ শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

তবে ট্রাম্পের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন যে, তারা যেন প্রতিশোধ না নেয়। তারা যেন মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।

“কারণ যদি আপনি প্রতিশোধ নেন, তাহলে পরিস্থিতি উত্তেজিত হবে,” ফক্স নিউজকে একথা বলেছেন তিনি।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহত্তম বাণিজ্য সঙ্গী, কানাডা এবং মেক্সিকোর নাম বুধবারের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা পূর্ববর্তী নির্বাহী আদেশ অনুসারে এই দুই দেশের সাথে আচরণ করবে। যেখানে ফেন্টানাইল এবং সীমান্ত সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দুটি দেশের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছিল।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেছেন, শুল্ক আরোপের কারণে কানাডার ওপর এখনো প্রভাব পড়বে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া ২৫ শতাংশ শুল্কের মতো পদক্ষেপ “সরাসরি লাখো কানাডিয়ানের উপর প্রভাব ফেলবে,” তিনি যোগ করেছেন।

তিনি “এই শুল্কগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের মাধ্যমে লড়াই করার” করার কথা বলেছেন এবং যোগ করেছেন যে, মার্কিন শুল্ক “বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করবে।”বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিশ্ব নেতাদের

Update Time : ০৭:০৪:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যতে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে “বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত” বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন।

তার এমন মন্তব্য অন্য অনেক দেশের, যেমন চীনের সাথে মিলে গিয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে এবং চীন জানিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ” পাল্টা দৃঢ় পদক্ষেপ” নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাঁচই এপ্রিল থেকে সমস্ত আমদানি পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং ৯ই এপ্রিল থেকে প্রায় ৬০টি দেশের ওপর আরও বড় ধরণের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় এমন পাল্টা সতর্ক বার্তা আসে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলো অন্যায্য বাণিজ্য নীতির প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি দাবি করেছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট ‘দয়া’ দেখিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার এই মন্তব্যও করেছেন যে, এই পদক্ষেপ “আমেরিকাকে আবারও ধনী করে তুলবে”।

যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যতে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বিশ্ব নেতাদের নিন্দা

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতি দেওয়ার সময়, ভন ডার লেইন বলেন, আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপের কারণে “অনিশ্চয়তা বাড়বে”, যা “বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জন্য মারাত্মক” পরিণতি ডেকে আনবে।

সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোর উপর এর প্রভাব কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ভন ডার লেইন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এখন সেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন – যা ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে – তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি বলেন, “যদি আপনি আমাদের একজনের বিরুদ্ধে যান, তার মানে আপনি আমাদের সকলের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন”,।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, সিদ্ধান্তটি “ভুল” হয়েছে। তবে তিনি “বাণিজ্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে” যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্পেন “একটি উন্মুক্ত বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে”। আয়ারল্যান্ডে টাওইসেক মিচেল মার্টিন বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত “ভীষণ দুঃখজনক” এবং “কারো জন্যই লাভজনক নয়”।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার এলিসি প্রাসাদে নতুন শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে, চীন – যাদেরকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট “সবচেয়ে খারাপ অপরাধী” হিসেবে দেখে –তাদের পণ্যের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্কের উপরে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে মোট শুল্ক কমপক্ষে ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে “অবিলম্বে শুল্ক বাতিল” করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে চীন “নিজস্ব অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা দৃঢ়ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

তাইওয়ান, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, তারা এই পদক্ষেপকে “অত্যন্ত অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছে।

তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী চো জং তাই বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে “গুরুতর প্রতিবাদ” জানাবে।

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ “একটি বাস্তবতায়” পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু। তিনি বলেছেন, তার সরকার “বাণিজ্য সংকট কাটানোর” উপায় খুঁজে দেখবে, কারণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

জাপান বলেছে, তাদের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার বিষয়টি “অত্যন্ত দুঃখজনক” এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং মার্কিন-জাপান চুক্তিগুলো লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড বলেছে, তারা তাদের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করবে।

ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার আগেই যেখানে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর সব শুল্ক বাতিল করেছিলেন, এখন তাদের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় তারা “সম্পূর্ণভাবে হতবাক” হয়ে পড়েছেন।

“আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত এই পদক্ষেপকে প্রতিরোধ করবে,” স্থানীয় মিডিয়াকে জানিয়েছেন ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের শুল্ক আরোপ চীনের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ ছিল। কারণ চীন, মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। মার্কিন বাণিজ্যে “শুল্ক বহির্ভূত” বাধা আরোপ করেছে। সেইসাথে চীন এমনভাবে কাজ করেছে, যা আমেরিকান অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোকে দুর্বল করে।

যে দেশগুলো সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্কের আওতায় পড়েছে, সেইসব দেশের নেতারাও ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বাজারের ওপর শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, এই “অন্যায় শুল্ক আরোপের” জন্য আমেরিকানদের সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে।

তার সরকার কোন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, : “আমরা এমন একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেব না, যার কারণে জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর করে দেবে”।”

ডাউনিং স্ট্রিটের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের ওপর কম শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য চুক্তির জন্য দেশটির সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার “প্রতিফলন” ঘটিয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেছেন, সরকার ” যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী, যা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ন্যায্য এবং ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।”

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ, ব্রাজিল বুধবার কংগ্রেসে একটি আইন অনুমোদন করেছে – অর্থনৈতিক প্রতিদান আইন (Economic Reciprocity Law) – যা ট্রাম্পের আরোপ করা ১০ শতাংশ শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

তবে ট্রাম্পের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন যে, তারা যেন প্রতিশোধ না নেয়। তারা যেন মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।

“কারণ যদি আপনি প্রতিশোধ নেন, তাহলে পরিস্থিতি উত্তেজিত হবে,” ফক্স নিউজকে একথা বলেছেন তিনি।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহত্তম বাণিজ্য সঙ্গী, কানাডা এবং মেক্সিকোর নাম বুধবারের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা পূর্ববর্তী নির্বাহী আদেশ অনুসারে এই দুই দেশের সাথে আচরণ করবে। যেখানে ফেন্টানাইল এবং সীমান্ত সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দুটি দেশের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছিল।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেছেন, শুল্ক আরোপের কারণে কানাডার ওপর এখনো প্রভাব পড়বে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া ২৫ শতাংশ শুল্কের মতো পদক্ষেপ “সরাসরি লাখো কানাডিয়ানের উপর প্রভাব ফেলবে,” তিনি যোগ করেছেন।

তিনি “এই শুল্কগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের মাধ্যমে লড়াই করার” করার কথা বলেছেন এবং যোগ করেছেন যে, মার্কিন শুল্ক “বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করবে।”বিবিসি