ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দেশের চলমান সব সংকট নাটকের অংশ, মানুষ ভোট দিতে চায়: মির্জা ফখরুল Logo ধেয়ে আসছে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা বেল্ট Logo ১৩ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু Logo যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম শাটডাউন অবসানের পথ খুঁজছেন সিনেটররা Logo যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল Logo সারাদেশে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি, শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি Logo নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ Logo কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান Logo আগামীকাল থেকে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা Logo বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে আ,লীগ ও  জাতীয় পার্টি–নুরুল হক নুর

বিরোধী দলনেতার জেল! সরকারের বিরুদ্ধে ফাঁসানোর অভিযোগে বিক্ষোভের আগুন তুরস্কে

বিরোধী দলনেতা একরেম ইমামোগলুর জেল হেফাজতের নির্দেশে বিক্ষোভ তুরস্কের জুড়ে

ইস্তানবুলের মেয়র তথা দেশের প্রধান বিরোধী দলনেতা একরেম ইমামোগলুকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল তুরস্কের একটি আদালত। দিন চারেক আগে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। রবিবার সেই মামলাতেই তুরস্কের আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

শুধু একা ইমামোগলু নন, দুর্নীতির অভিযোগে ইস্তানবুলের মেয়র ছাড়াও আরও ২০ জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও সন্ত্রাসবাদ তদন্ত মামলায় ইমামোগলুকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে। ইমামোগলুর আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিক্ষোভের আগুনে তেতে রয়েছে তুরস্ক। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইস্তানবুলের মেয়রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

তুরস্কের গদিতে বর্তমানে রয়েছেন রিচেপ তাইপ এর্ডোয়ান। গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তিনি। এত দিন পর্যন্ত সে দেশে বিরোধীশিবির সে ভাবে মাথাচাড়া দিতে পারেনি। তবে তুরস্কের রাজনৈতিক মহল এখন ইমামোগলুকেই এর্ডোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখছে। ২০২৮ সালে রয়েছে দেশের জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এর্ডোয়ানকে জোর টক্কর দিতে পারেন ইমামোগলু। কেউ কেউ তো আবার পালাবদলের সম্ভাবনার কথাও বলছেন। সেই আবহে ইমামোগলুর গ্রেফতারি তুরস্কের বিরোধীশিবিরকে রাস্তায় নামিয়েছে। দিকে দিকে চলছে বিক্ষোভ।

উল্লেখ্য, তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল ‘রিপাবলিকান পিপল্‌স পার্টি’র (সিএইচপি) নেতা ইমামোগলু। আগামী নির্বাচনে তাঁকেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করেছে দল। স্বভাবতই, তাঁর গ্রেফতারি বিরোধীশিবিরকে তাতিয়ে দিয়েছে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের তেজ আরও বাড়িয়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সিএইচপি। ইস্তানবুলের মেয়রের সহযোগী তথা আঙ্কারার মেয়র মনসুর ইয়াভাস জানান, এ ভাবে ইমামোগলুকে কারাগারে রাখা বিচারব্যবস্থার জন্য ‘কলঙ্কজনক’।

রবিবার আদালতের নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পর বিক্ষোভের ঝাঁঝ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ছিল সরকারের। সেই কথা মাথায় রেখেই শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ইস্তানবুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। সংবাদমাধ্যম আল জাজ়িরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি সত্ত্বেও শনিবার রাতে ইস্তানবুল, আঙ্কারা-সহ ৫০টি শহরে অশান্তির সৃষ্টি হয়। তুরস্কের পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে শুধুমাত্র ইস্তানবুলেই তিন লক্ষ মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যদিও বিরোধীদের দাবি, সেই সংখ্যাটা ১০ লক্ষের বেশি।

তুরস্কের রাজনীতিতে ইস্তানবুলের মেয়র পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত এই কুর্সিতে ছিলেন এর্ডোয়ান। বস্তুত মেয়র হওয়ার পরই দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তা হু-হু করে বাড়তে থাকে তাঁর। এর উপর ভর করে ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। টানা ১১ বছর সংশ্লিষ্ট পদে থেকে আইন বদলে ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ বা একেপির এই বর্ষীয়ান নেতা। তবে সেই একচেটিয়া সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরিয়েছেন ইমামোগলু, এমনই দাবি বিরোধীদের। শুধু সিএইচপি নয়, অনেক ইউরোপীয় নেতাও পাশে দাঁড়িয়েছেন ইস্তানবুলের মেয়রের। অনেকের দাবি, গদি টলমল বুঝেই ইমামোগলুকে জেলে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন এর্ডোয়ান। ইমামোগলুও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এর্ডোগান সরকারের পাল্টা দাবি, দুর্নীতি থেকে দৃষ্টি সরাতেই মিথ্যা অভিযোগ করছে সিএইচপি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশের চলমান সব সংকট নাটকের অংশ, মানুষ ভোট দিতে চায়: মির্জা ফখরুল

বিরোধী দলনেতার জেল! সরকারের বিরুদ্ধে ফাঁসানোর অভিযোগে বিক্ষোভের আগুন তুরস্কে

Update Time : ০৮:০৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

ইস্তানবুলের মেয়র তথা দেশের প্রধান বিরোধী দলনেতা একরেম ইমামোগলুকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল তুরস্কের একটি আদালত। দিন চারেক আগে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। রবিবার সেই মামলাতেই তুরস্কের আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

শুধু একা ইমামোগলু নন, দুর্নীতির অভিযোগে ইস্তানবুলের মেয়র ছাড়াও আরও ২০ জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও সন্ত্রাসবাদ তদন্ত মামলায় ইমামোগলুকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে। ইমামোগলুর আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিক্ষোভের আগুনে তেতে রয়েছে তুরস্ক। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইস্তানবুলের মেয়রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

তুরস্কের গদিতে বর্তমানে রয়েছেন রিচেপ তাইপ এর্ডোয়ান। গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তিনি। এত দিন পর্যন্ত সে দেশে বিরোধীশিবির সে ভাবে মাথাচাড়া দিতে পারেনি। তবে তুরস্কের রাজনৈতিক মহল এখন ইমামোগলুকেই এর্ডোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখছে। ২০২৮ সালে রয়েছে দেশের জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এর্ডোয়ানকে জোর টক্কর দিতে পারেন ইমামোগলু। কেউ কেউ তো আবার পালাবদলের সম্ভাবনার কথাও বলছেন। সেই আবহে ইমামোগলুর গ্রেফতারি তুরস্কের বিরোধীশিবিরকে রাস্তায় নামিয়েছে। দিকে দিকে চলছে বিক্ষোভ।

উল্লেখ্য, তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল ‘রিপাবলিকান পিপল্‌স পার্টি’র (সিএইচপি) নেতা ইমামোগলু। আগামী নির্বাচনে তাঁকেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করেছে দল। স্বভাবতই, তাঁর গ্রেফতারি বিরোধীশিবিরকে তাতিয়ে দিয়েছে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের তেজ আরও বাড়িয়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সিএইচপি। ইস্তানবুলের মেয়রের সহযোগী তথা আঙ্কারার মেয়র মনসুর ইয়াভাস জানান, এ ভাবে ইমামোগলুকে কারাগারে রাখা বিচারব্যবস্থার জন্য ‘কলঙ্কজনক’।

রবিবার আদালতের নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পর বিক্ষোভের ঝাঁঝ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ছিল সরকারের। সেই কথা মাথায় রেখেই শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ইস্তানবুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। সংবাদমাধ্যম আল জাজ়িরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি সত্ত্বেও শনিবার রাতে ইস্তানবুল, আঙ্কারা-সহ ৫০টি শহরে অশান্তির সৃষ্টি হয়। তুরস্কের পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে শুধুমাত্র ইস্তানবুলেই তিন লক্ষ মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যদিও বিরোধীদের দাবি, সেই সংখ্যাটা ১০ লক্ষের বেশি।

তুরস্কের রাজনীতিতে ইস্তানবুলের মেয়র পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত এই কুর্সিতে ছিলেন এর্ডোয়ান। বস্তুত মেয়র হওয়ার পরই দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তা হু-হু করে বাড়তে থাকে তাঁর। এর উপর ভর করে ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। টানা ১১ বছর সংশ্লিষ্ট পদে থেকে আইন বদলে ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ বা একেপির এই বর্ষীয়ান নেতা। তবে সেই একচেটিয়া সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরিয়েছেন ইমামোগলু, এমনই দাবি বিরোধীদের। শুধু সিএইচপি নয়, অনেক ইউরোপীয় নেতাও পাশে দাঁড়িয়েছেন ইস্তানবুলের মেয়রের। অনেকের দাবি, গদি টলমল বুঝেই ইমামোগলুকে জেলে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন এর্ডোয়ান। ইমামোগলুও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এর্ডোগান সরকারের পাল্টা দাবি, দুর্নীতি থেকে দৃষ্টি সরাতেই মিথ্যা অভিযোগ করছে সিএইচপি।