ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সাঁথিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন Logo নানা আয়োজনে নীলফামারীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন Logo আত্রাইয়ে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo রোবটের সাথে নাচলেন ইলন মাস্ক Logo চারঘাটে মোটরসাইকেল -এ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর Logo জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে  ঈশ্বরদীতে আলোচনা সভা ও কর্মী সমাবেশ Logo জাতির প্রকৃত শক্তি কেবল তার প্রাকৃতিক সম্পদে নয়: প্রধান উপদেষ্টা Logo তিস্তা নদী রক্ষায় তরুণ-তরুণীদের ফ্ল্যাশমব Logo ইসি শতভাগ প্রস্তুত: ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব Logo চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে  ১২ কোটি টাকার স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সম্মেলন

মিয়ানমারের বন্দিশালা থেকে মুক্ত ১৯ বাংলাদেশি

ঢাকা : কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে ১৯ বাংলাদেশিকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) তাদের মুক্ত করা হয়। পরে তাদের দেশে পাঠানো হয়। রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দেরে অবতরণ করেন মুক্ত বাংলাদেশিরা।

ভালো চাকরি ও বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারীরা এই বাংলাদেশিদের প্রথমে থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের নেয়া হয় মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে। সেখানে পাচারকারীরা তাদের দিয়ে সাইবার অপরাধমূলক কাজ করাতো। কেউ রাজি না হলে বৈদ্যুতিক শকসহ ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো।

এমন নির্যাতনে একজন অসুস্থ হয়ে রক্তবমি শুরু করলে তার সঙ্গে জুনায়েদ নামে এক বাংলাদেশিকে দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর জুনায়েদ সেখান থেকে পালিয়ে নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডে চলে আসেন। এরপর তিনি বাকিদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন।

সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ ১৯ জনের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে মোট ২২ জন বাংলাদেশি মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে মুক্তি পেয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত অর্থ কামানোর লোভে এ বাংলাদেশিরা দুবাই থেকে থাইল্যান্ড যান। পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চলের বন্দি শিবিরে নিয়ে যান এ বাংলাদেশিদের।

জানা যায়, এ বন্দি শিবিরগুলো মূলত মিয়ানমারে অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৩০টি বন্দি শিবির রয়েছে। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার যৌথ বাহিনী অতি সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে এরকম ৪/৫টি বন্দি শিবির গুড়িয়ে দিয়েছে। এসব বন্দি শিবিরে আইটি খাতের লোকজনদের অতিরিক্ত অর্থ কামানোর লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর জোরপূর্বক কাজ করানো হয়, অনেক সময় টার্গেট পূরণ করতে না পারলে নির্যাতন করা হয় এবং এসব বন্দি শিবির এলাকা থেকে কাউকে বাইরে বের হতে দেয়া হয় না।

এর আগে এমন একটি বন্দি শিবির থেকে একজন বাংলাদেশি পালিয়ে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে এসে আশ্রয় নিলে তখন বাংলাদেশ দূতাবাস জানতে পারে। ওই বাংলাদেশি প্রায় এক মাস ইয়াঙ্গুনে আশ্রয় নেয়ার পর বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশে ফেরেন। এরপর অন্য বাংলাদেশিদের উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করলে মিয়ানমার সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায় যে সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চল স্পর্শকাতর এলাকা, সেখানে বাইরের কারোর প্রবেশের অনুমতি নাই। তবে বাংলাদেশ যদি থাইল্যান্ডকে ম্যানেজ করতে পারে তবে থাইল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশিরা মুক্তি পেতে পেতে পারে।

পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করে। থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এই বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে থাইল্যান্ড সরকার অনুমতি দেয়। যার ফলে মঙ্গলবার ১৯ বাংলাদেশিকে মিয়ানমারের ওই অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে ব্যাংককে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতেই বাংলাদেশ পৌছায় তারা।

কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা গেছে, এরই মধ্যে মিয়ানমারে অবস্থিত এসব বন্দি শিবির থেকে চীনের প্রায় ৬০০০ নাগরিক, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৪০০ জন এবং ভারতের ২৮৫ জন নাগরিকদের উদ্ধার করে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সাঁথিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন

মিয়ানমারের বন্দিশালা থেকে মুক্ত ১৯ বাংলাদেশি

Update Time : ০১:১৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

ঢাকা : কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে ১৯ বাংলাদেশিকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) তাদের মুক্ত করা হয়। পরে তাদের দেশে পাঠানো হয়। রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দেরে অবতরণ করেন মুক্ত বাংলাদেশিরা।

ভালো চাকরি ও বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারীরা এই বাংলাদেশিদের প্রথমে থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের নেয়া হয় মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে। সেখানে পাচারকারীরা তাদের দিয়ে সাইবার অপরাধমূলক কাজ করাতো। কেউ রাজি না হলে বৈদ্যুতিক শকসহ ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো।

এমন নির্যাতনে একজন অসুস্থ হয়ে রক্তবমি শুরু করলে তার সঙ্গে জুনায়েদ নামে এক বাংলাদেশিকে দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর জুনায়েদ সেখান থেকে পালিয়ে নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডে চলে আসেন। এরপর তিনি বাকিদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন।

সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ ১৯ জনের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে মোট ২২ জন বাংলাদেশি মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে মুক্তি পেয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত অর্থ কামানোর লোভে এ বাংলাদেশিরা দুবাই থেকে থাইল্যান্ড যান। পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চলের বন্দি শিবিরে নিয়ে যান এ বাংলাদেশিদের।

জানা যায়, এ বন্দি শিবিরগুলো মূলত মিয়ানমারে অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৩০টি বন্দি শিবির রয়েছে। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার যৌথ বাহিনী অতি সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে এরকম ৪/৫টি বন্দি শিবির গুড়িয়ে দিয়েছে। এসব বন্দি শিবিরে আইটি খাতের লোকজনদের অতিরিক্ত অর্থ কামানোর লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর জোরপূর্বক কাজ করানো হয়, অনেক সময় টার্গেট পূরণ করতে না পারলে নির্যাতন করা হয় এবং এসব বন্দি শিবির এলাকা থেকে কাউকে বাইরে বের হতে দেয়া হয় না।

এর আগে এমন একটি বন্দি শিবির থেকে একজন বাংলাদেশি পালিয়ে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে এসে আশ্রয় নিলে তখন বাংলাদেশ দূতাবাস জানতে পারে। ওই বাংলাদেশি প্রায় এক মাস ইয়াঙ্গুনে আশ্রয় নেয়ার পর বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশে ফেরেন। এরপর অন্য বাংলাদেশিদের উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করলে মিয়ানমার সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায় যে সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চল স্পর্শকাতর এলাকা, সেখানে বাইরের কারোর প্রবেশের অনুমতি নাই। তবে বাংলাদেশ যদি থাইল্যান্ডকে ম্যানেজ করতে পারে তবে থাইল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশিরা মুক্তি পেতে পেতে পারে।

পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করে। থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এই বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে থাইল্যান্ড সরকার অনুমতি দেয়। যার ফলে মঙ্গলবার ১৯ বাংলাদেশিকে মিয়ানমারের ওই অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে ব্যাংককে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতেই বাংলাদেশ পৌছায় তারা।

কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা গেছে, এরই মধ্যে মিয়ানমারে অবস্থিত এসব বন্দি শিবির থেকে চীনের প্রায় ৬০০০ নাগরিক, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৪০০ জন এবং ভারতের ২৮৫ জন নাগরিকদের উদ্ধার করে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে।